পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৩৫

 প্রমীলা-দ্বয়ের কথা উপলক্ষ্যে আমাদের মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদাকে। কিন্তু তাঁর কল্পনাপ্রসূতা সেই মেয়েটির কথাই আগে বলি, যে সেদিনের অঙ্গদেশের মহামন্ত্রীর কাছে আত্মপরিচয় দিচ্ছিল;

“ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিরে ভুলাতে পাঠাইলে বনে যে কয়জনা,
সাজায়ে যতনে ভূষণে রতনে আমি তারই এক বারাঙ্গনা”।

 ব্যাধবাণবিদ্ধা ত্রস্তা হরিণীর মত অন্তর্বিদ্ধ সেই মেয়েটি! তার মর্মবেদনা না বুঝে কূটনীতিজ্ঞ ‘‘হাজার পোড়-খাওয়া সুবিজ্ঞ রাজমন্ত্রীর উপহাসকুটিল হাস্যাভাসে অধিকতর আহত হয়ে অভিমানভরে সে বেচারী বলে উঠেছিল;—

‘মন্ত্রি আবার, সেই বাঁকা হাসি? না হয় দেবতা আমাতে নাই,
মাটি দিয়ে তবু গড়ে ত প্রতিমা, সাধকেরা পূজা করে ত তাই?
একদিন তার পূজা হয়ে গেলে চিরদিন তরে বিসর্জন,
খেলার পুতলি করিয়া তাহারে আর কি খেলিবে পৌরজন?”

 রঙ্গলালের ‘‘পদ্মিনী”তে পদ্মাবতের সেই চিরকাহিনী বাঙ্গালীর কানের কাছে ঝঙ্কৃত হলো। আজ সেই অতুলনীয়া রাজপুত রাণীর শৌর্য বীর্য ধৈর্য ও তীক্ষ্ণবুদ্ধির কুটকৌশলকে রূপকথা বলে কথা উঠলেও মানুষের প্রাণের মধ্যে সে যে সুদৃঢ় আসন নিয়েছে, সেখান থেকে তাকে স্থানচ্যুত করা সহজ নয়। পদ্মিনী সত্য না হলেও কবি-কল্পনার যে একটি অপূর্ব আদর্শ সৃষ্টি, তাতে সন্দেহ নেই এবং বিভিন্ন নামে ও রূপে এঁরাই যে সেদিন রাজপুতানার ঘরে ঘরে অধিষ্ঠাত্রী ছিলেন তাও নিঃসংশয়িত সত্য।

 জ্যোতিরিন্দ্রনাথের “সরোজিনী” নাটকে এই পদ্মিনীই