পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

“আয় মা আমার সাথে কোন ভয় নাহি আর।
কত দুঃখ পেলি বনে আহা মা আমার!”

 শিশুসম্পর্কীয় এই সকল চিত্র দৃঢ়বলিষ্ঠ পুরুষচিত্রের অন্তঃসলিলা স্নেহফল্গুর যে নিগূঢ়তম পরিচয় ব্যক্ত করেছে এ আর কোন সাহিত্য দিতে পারে নি। এর কাছে দুর্দান্ত দস্যু, কর্তব্যপরায়ণ ধার্মিক রাজ্যেশ্বর, সংসারবৈরাগী তপস্বীও যে বাদ পড়ে না এই সত্যই বড় সুন্দররূপে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে। অত বড় দুর্দমনীয় রঘুপতিও এই বিশ্বপ্লাবী স্নেহবন্যার সর্বনাশী খরস্রোতে ভেসে গেলেন! দেখা গেল কচিমুখের আব্দার আর ছোট্ট প্রাণের আবেদনকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না; না হ’লে আর সেই মদদৃপ্ত দাম্ভিকাচার্য রঘুপতি সহস্রবার বিতাড়িতা অপর্ণার হাত ধরে আর্তকণ্ঠে বলছেন;—“মা জননি! এ পুত্রঘাতীরে পিতা বলে যে ডাকিত, সেই রেখে গেছে ওই সুধামাখা নাম তোর কণ্ঠে, এইটুকু দয়া করে গেছে! আহা ডাক আরবার।”

 বড় বড় কথার উজানে ভেসে গিয়ে কবি “কাঙ্গালিনী মেয়ে’’ বা সেদিনের কিশোরী বঙ্গবধূকেও ভুলে যান নি;—

“বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল্‌
পুরাণো সেই সুরে, কে যেন ডাকে দূরে,
কোথা সে ছায়া সখী কোথা সে জল্‌?
কোথা সে বাঁধাঘাট, অশথ-তল্‌!

কোথায় আছ তুমি, কোথায় মাগো
আর কি উপকথা বলিবি না গো?”