পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
॥৹

সঙ্গীত সম্মীলনীতে আমারই লেখা “সাগরিকার" অভিনয় দেখতে গিয়ে এবং পরে আরও ঐ রকম কয়েক স্থানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছিল। ওঁর ছবি দেখে দেখে আমার মনে ওর সুন্দর মূর্ত্তিটি যে মুদ্রিত হয়ে গিয়েছিল, তাই প্রথম দিনে দেখেই ওঁকে চিনতে আমার বাধেনি। পরে যেখানেই দেখেছি, সহস্রের মধ্যে ঐ দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে। একটা কেমন যেন স্নেহ পড়ে গিয়েছিল। ছবি মানুষের কতটুকুই বা পরিচয়, মানুষ তার অনেকখানি উপরে, একথা সত্যি হ'লেও একটি বিষয়ে লীলা দেবীর ছবির সঙ্গে লীলা দেবীর বিশেষ একটা সাদৃশ্য বেশ দেখতে পাওয়া যেত, সেটা তাঁর চিত্রের মতই প্রশান্ত নিরবতা। কথা তিনি খুবই কম কইতেন, শুধু তাই নয়; চোখের দৃষ্টিতেও কেমন যেন একটা সুদুর নিরাসক্ত উদাসীনতা;—যা'তে করে তাঁকে খুব বেশী নিকটে টানবার ভরসা হয়না, ঈষৎ সম্ভ্রমের সঙ্গে নীরবে প্রতীক্ষা করতে হয়। অথচ আমি তাঁর থেকে যতটা দূরের মানুষ, কতটুকুই বা আমাদের দেখাশোনা, আশ্চর্য্য হই যে, সে হিসাবে আমি তাঁকে নিকটবর্তী করে নিয়েছিলুম। কোথায় যেন মনের গহন-গুহায় নিহিত একটা মানসিক সাদৃশ্য থাকে, কর্মবন্ধন থাকে, মানুষের অবচেতন মনের তলায় কি যে কখন চাপা পড়ে থাকে, সব সময় সেটা স্পষ্ট ক'রে বলা যায়না, নিজেই শুধু অনুভব করা চলে। প্রিয়তরের সাদৃশ্য এবং ওঁর ঐ নিস্পৃহ ঔদাস্য ঐ দুটো জিনিষে মিলে আমার তখনকার ভাবপ্রবণ মনকে হয়ত অতটাই উনি আকর্ষণ করে থাকবেন। ওঁর মধ্যে সংসার বহির্ভূত একটা ভাব-দ্যোতনা দেখতে পেয়েছিলাম। ভাব প্রবণদের মনের গঠনতো একটু সৃষ্টি ছাড়া হয়েই থাকে! এমনও হয়েছে, তাঁর হাসি এবং কথায় অকস্মাৎ আমার চির অপগতা প্রিয় বান্ধবীকে আমি যেন দেখতে পেয়েছি। তাই যেখানে দেখা হয়েছে, লীলা দেবীকে চোখ থেকে সরাতে পারিনি। তাঁকে শেষ দেখেছি নদীয়ার রাজবাটীতে। পূর্ণিমা দেবীর বিবাহের প্রতিভোজনে। প্রথম দেখেই