॥৴৹
চমকে উঠেছিলুম। নিরঞ্জনের পর দেবী প্রতিমার দিকে চাইলে মনের মধ্যে যে ভাব আসে, ঠিক সেই রকম মনোভাব নিয়ে স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলাম। সেই লীলাই বটে, অথচ সেই প্রথম দৃষ্ট ছবির মত, বিসর্জনের প্রতিমার মত, দেহে যেন ওঁর প্রাণ নেই! জীবনে সমস্ত পেয়েও যিনি জীবনে শান্তি পাননি, যেন সেই সমস্ত সুখ ও দুঃখ থেকে বিযুক্ত হয়ে তাঁর অন্তরাত্মা ভবভূতির সীতার মতই ছায়াময়ী রূপে মর্ত্ত্যধামে বিচরণ করছেন, কায়াময়ী লীলা যেন সে প্রতিমার মধ্যে নেই। সেই স্তব্ধ নীরব মূর্তিটীর পাশে ব্যথাজড় চিত্ত নিয়ে বহুক্ষণ নীরবে বসে রইলেম, সেদিনের আনন্দোৎসবে আর ভাল করে যোগ দিতে পারলেম না। কিছুকাল পরে যখন সংবাদ পত্রে “বিজয়াদশমীর’’ সংবাদ পেলেম খুব বেশ আশ্চর্য্য হইনি। সেই দিনই দেখেছিলেম বিসর্জন তাঁর হয়েই গেছে! নিরাসক্ততার চরমে পৌঁছে মানুষ বেশী দিন বাঁচতে পারেনা। একমাত্র সন্তান হারা জনক জননীর ব্যথা অন্তরে অনুভব করে বারে বারেই চোখ মুছেছিলেম। মনে মনে লীলাকে আশীর্বাদ করেছিলেম, ‘‘এই নব জীবনে তুমি চির শান্তির অধিকারিণী হয়ো’’।
ধর্মতত্ত্বের মতই কর্মতত্ত্ব বড় সূক্ষ্ম, আমরা আজও তার হিসাব মিলাতে শিখিনি। তখন স্বপ্নেও জানতেম না যে আমার সেই গোপন আকর্ষণ আজ প্রত্যক্ষ হয়ে তাঁর জীবন স্মৃতির সঙ্গে আমার নামকে একত্র বিজড়িত করে আমাকেই তাঁর প্রথম স্মৃতি পূজা করাবে! লীলা দেবীর বাহ্যরূপই নয়; মধুর শান্ত স্বভাবই নয়; তাঁর অন্তরের সমুজ্জ্বল কবি-প্রতিভা, সাহিত্য সাধনার প্রতি একান্ত অনুরাগ, সকল দিক দিয়েই তাঁর জীবনটিকে নারী সুলভ সৌকুমার্যে মণ্ডিত করেছিল। এতটা দেবদত্ত ঐশ্বর্য্যের একত্র সমাবেশ প্রায় দেখা যায়না, অথচ আশ্চর্য্য এই যে, জগতে এ জিনিষের ও সমুচিত মূল্য দিতে মানুষ পেরে ওঠেনা! তাঁর “ধ্রুবা” ‘‘রূপহীনার রূপ’’ উপন্যাস দু’খানির মর্মকথা বড় করুণ ও হৃদয় স্পর্শী। পড়তে পড়তে ভাঙ্গা বুকের একটী অতি করুন কান্নার