পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

শেষে বহু দিন অপেক্ষার পর বৈজয়ন্তী কৃষ্ণনাথকে নিম্নলিখিত দুই ছত্র কবিতা লিখে পাঠান।

“জিত-ধূমসমূহায় জিত-ব্যজন-বায়বে।
মশকায় ময়া কায়ঃ সায়মারভ্য দীয়তে॥”

 “সন্ধ্যা থেকে সারারাত মশারা আমার দেহকে কষ্ট দিচ্ছে, তারা ধোঁয়াও মানে না, পাখার হাওয়াও মানে না।” এর নিগূঢ় অর্থ “আমি তোমার জন্য সারারাত জেগে ব’সে থাকি, তুমি না এলে কে আমার দুঃখ দূর করবে?” কৃষ্ণনাথ কবির এই ব্যঞ্জনাপূর্ণ চিঠি পেয়ে তাঁর নিজের অপরাধ বুঝতে পারলেন, পত্নীর কবিত্বের জন্য গর্ব অনুভব করলেন। একটি প্রণয়লিপিতে তিনি উপেক্ষিতা পত্নীকে সম্বর্ধিত করলেন, বৈজয়ন্তী তার উত্তরে লিখলেন:

“পুন্নাগ চম্পক লবঙ্গ সরোজমল্লি
মাতঙ্গযুথিরসিকস্য মধুব্রতস্য।
যৎ কুন্দবৃন্দ কুটজেষঘপি পক্ষপাতঃ
সদ্বংশজস্য মহতোহি মহত্বমেতৎ॥”

“হে মধুকর, তোমার ব্রত হচ্ছে নাগকেশর, চাঁপা, লবঙ্গ, পদ্ম, মল্লিকা, যুঁই প্রভৃতি সুন্দর ফুলের মধুপান করা, আজ যে কুন্দ এবং কুর্চি ফুলের প্রতি তুমি পক্ষপাত দেখাচ্ছ, এ তোমার মতো সদ্বংশজাত মহতেরই মহত্ব।” এই অভিমান পূর্ণ ব্যাজ-স্তুতি কৃষ্ণনাথকে অনুতপ্ত এবং মুগ্ধ ক’রল, তিনি কবির কাছে ক্ষমা চেয়ে তাঁকে বাড়া নিয়ে এলেন। এই কবি দম্পতীর লেখা ‘আনন্দ লতিকা ঐযুগের একখানি বিখ্যাত বই। তাতে বৈজয়ন্তী দেবীর লেখা বহু শ্লোক আজও পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে।