পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাব্য ও অলঙ্কার ኧ ጓ চেতনা, কৃতি, ইচ্ছা প্রভৃতির দ্বারা তাহার আত্মাকে অকুমান করা সম্ভবপর ; তাহার শৌর্য, দক্ষিণ্য, দয়া প্রভৃতি গুণ সাধারণের অনুভবগোচর ; কটক, কুণ্ডল প্রভৃতি আভরণ যে তাহার শরীরকে ভূষিত করে তাহা বুঝিতে বিলম্ব হয় না ; তাহারা যে পুরুষদেহের সহিত , অভিন্ন নহে, তাহ প্রত্যক্ষগোচর। কিন্তু শবদার্থময় সাহিত্যের ক্ষেত্রে কি আত্মা, গুণ, অলঙ্কার প্রভৃতির সেইরূপ নিঃসন্দিগ্ধ প্রতীতি সম্ভব ? কাব্যশরীরের উপাদান শব্দ ও অর্থ হইতে তাহার অtয়া, গুণ, রীতি, অলঙ্কার প্রভৃতির পৃথক্করণ (abstraction) কি কাব্যমীমাংসকগণের একটা নিছক কল্পনামাত্ৰ মহে ? প্রথমত অলঙ্কার বিষয়েই আলোচনা করা যাউক । সাধারণ পাঠক যখন কাব্যসম্বন্ধে কোনও ধারণা করিতে যায়, তখন অলঙ্কারের কথা স্বতই তাহার বুদ্ধিতে প্রতিভাত হয় । দৈনন্দিন ব্যবহারজীবনের ভাষা ও সাহিত্য বা কাব্যের ভাষার মধ্যে প্রভেদ কোথায় ?—সাধারাণ পাঠককে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে, অনেকেই বলিবে, অলঙ্কারে । আমাদের ব্যবহারজীবনের ভাষা ‘আটপৌরে’, নিরাভরণ , শব্দেেক মার্জিত করিবার, তাহাকে বিশিষ্টভাবে বিন্যস্ত করিবার দিকে আমাদের লক্ষ্যই থাকে না। ব্যবহারজীবনে আমরা যখন মাননীয় ব্যক্তিকে নিমন্ত্রণ-অবসরে, “মহাশয়! অযুগ্রহপূর্বক সভাস্থলে উপস্থিত হইলে বাধিত হইব” এই পর্যন্ত বলিলেই যথেষ্ট সৌজন্য রক্ষিত হইল বলিয়া মনে করি, কবির লেখনী এই নিতাস্ত সাধারণ আমন্ত্রণকেই কত বক্রভাবে, কত বৈদগ্ধ্যের সহিত পত্রপাত্রীর মুখ দিয়া তাহার কাব্যে প্রকাশ করিয়া থাকেন ! “মহাশয়! আমাদের গৃহ অনুগ্রহপূর্বক অলঙ্কত করিবেন কি ?” “মহাভাগের উদার আকৃতি দর্শনে আমাদের নেত্র সফল হইবে।” ইত্যাদি । অভিজ্ঞান-শকুন্তল নাটকের প্রথম অঙ্কে মহারাজ দুন্যস্তের আকস্মিক আশ্রমপ্রবেশে বিস্মিতা অনস্বয়া তাহার পরিচয় ও আগমনের উদ্দেশ্য জানিবার জন্য কত বক্রোক্তিরই আশ্রয় লইয়াছে— “আর্যের মধুর বিপ্রস্তালাপ আমাকে (এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা বিষয়ে ) মন্ত্রণা