পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাব্য ও অলঙ্কার 33 ‘জীবাতু’ তাহা স্পষ্টই বুঝা গেল, এবং এই বক্রোক্তিই লৌকিক বাক্যসমূহকে কাব্যের পদবীতে উত্তীর্ণ করিয়া থাকে। প্রাচীন আলঙ্কারিকগণের “কাব্য’ লক্ষণ পর্যালোচনা করিলে সাহিত্যক্ষেত্রে অলঙ্কারের প্রাধান্য অতি সুস্পষ্টভাবে লক্ষিত হইবে। চিরন্তন অলঙ্কারিক আচার্য ভামহ তাহার কাব্যালঙ্কার গ্রন্থে বলিয়াছেন, “মুন্দরীর মুখচ্ছবি যতই কমনীয় হউক না কেন, ভূযাহীন হইলে কখনই তাহ শোভা পায় না ।" পরবর্তীকালে বামনাচার্য র্তাহার কাব্যালঙ্কার-সুত্রবৃত্তি’ গ্রন্থের উপক্রমেই ভামহের এই উক্তিরই প্রতিধ্বনি করিয়াছেন, “অলঙ্কারবশতই কাব্য সহৃদয়গণের অস্বাদনীয় হইয় উঠে।” সাধারণ লৌকিক বুদ্ধিতে কাব্যের সহিত অলঙ্কারের সম্বন্ধ এমনই অবিচ্ছেদ্য যে, পরবতী একজন অলঙ্কারিক মন্তব্য করিয়াছেন-- “যে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি অনলস্কৃত শব্দার্থ যুগলকে কাব্যরূপে স্বীকার করিতে কুষ্ঠিত হন না, তিনি কি জন্যই প। অনলকে অমুঞ্চ বলিয়া কল্পনা করেন না ?” অভিপ্রায় এই : বহ্নিকে অনুষ বলিয়া কল্পনা করা যেরূপ অস অলঙ্কার-বিহীন শব্দীর্থের কাব্যত্বকল্পনা ততোধিক অসম্ভব । অধিক কি, সাহিত্যবিচারে অলঙ্কারের এই অত্যধিক প্রাধান্তই ‘সাহিত্য-মীমাংসা’-শাস্ত্রের ‘অলঙ্কার-শাস্ত্র ব্যপদেশের মূলে । সংস্কৃতসাহিত্যবিচারের যে কোনও গ্রন্থ পাঠ করিলে দেখা যাইবে যে, উহার প্রতিপাদ্য বিষয় শুধু অলঙ্কারই নয়—ধ্বনি, রীতি, গুণ, দোষ প্রভৃতির বিশ্লেষণ এবং মীমাংসাও উহার উদ্দেশ্য। কিন্তু অলঙ্কারবিচার আর সকল বিচারকে ছাপাইয়। উঠিয়াছে, এবং সেইজন্যই সাহিত্যমীমাংসা-বিষয়ক গ্রন্থসমূহ সাধারণ পাঠকসমাজে অলঙ্কার গ্র বলিয়া পরিচিত। ‘প্রাধান্তেন ব্যপদেশ ভবন্তি । | মানবসভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাসে কটক, কুণ্ডল প্রভৃতি অলঙ্কার এককালে সৌন্দর্যের অপরিহার্য উপাদান ছিল । সাহিত্যের ক্রমবিকাশের ইতিহাসের প্রাথমিক পর্যায়ে অনুপ্রাস, যমক প্রভৃতি শব্দালঙ্কার এবং উপমা, রূপক,