পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> e 8 সাহিত্য-মীমাংসা অনলঙ্কত কাব্যশরীরের অস্তিত্ব তাহাদের মতে মানিয়া লইতে হয়। কিন্তু অলঙ্কারযোজনায় ইহাই কি অনুভবসিদ্ধ পদ্ধতি ? উত্তম কাব্যের যে সকল অলঙ্কার, তাহারা কি নারীদেহের অলঙ্কারের ন্যায় কতকগুলি শিথিলবিন্যস্ত জড়-পদার্থমাত্র ? যে আবেগবশে কবি র্তাহার অস্তনিরুদ্ধ রসধারা শব্দার্থযুগলের মধ্য দিয়া প্রকাশ করিয়া থাকেন, সেই একই আবেশের দ্বারা কি অলঙ্কারসমূহও জন্মলাভ করে না ? তাহদের জন্য কি কোনও পৃথক প্রযত্বের বা অভিনিবেশের অবিশ্বকতা উত্তমকবি উপলব্ধি করিয়া থাকেন ? বিচার করিয়া দেখিলে প্রাচীন আচার্যগণের মতবাদের ভিত্তি শিথিল হইয়া পড়ে । ‘কাব্যের অলঙ্কার’ এইরূপ উক্তির দ্বারা ‘কাব্য’ ও ‘অলঙ্কারে’র মধ্যে যে ভেদ প্রতীত হইয়া থাকে, তাহার মূলে কোনও অভ্রাস্ত যুক্তি নাই, এবং তাহা সহৃদয়ের অনুভববিরুদ্ধ উত্তমকাব্যে শব্দ ও অর্থের সহিত অলঙ্কারের অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ । রসাবিষ্ট কবিচিত্ত স্বগত ভাবের প্রকাশের দিকেই তন্ময়ীভূত হইয়া থাকে, শব্দ এবং অর্থ স্বতই উৎসারিত হইয় আসে— বিচিত্র বক্রোক্তির আকারে, বিবিধ অলঙ্কারের রূপ ধরিয়া । অতএব উত্তমকাব্যের যে সকল "বক্রোক্তি’ বা ‘অলঙ্কার’, তাহা শব্দার্থের কোনও বাহ বা অগস্তুক ধর্ম নহে। উহা শব্দার্থেরই অন্তরঙ্গ বিলাস । এইরূপে, যেসকল অলঙ্কার ‘অপৃথগ যত্ননির্বর্ত্য তাহারাই উত্তমকাব্যের প্রকৃত শোভার হেতু, তাহারাই প্রকৃত ‘অলঙ্কার’ যমক, অকুপ্রাস প্রভৃতি শব্দালঙ্কার কাব্যদেহের সহিত এইরূপ অন্তরঙ্গভাবে সস্বদ্ধ নহে। তাহদের উদ্ভাবনের জন্য কবির স্বতন্ত্র অভিনিবেশ আবশ্যক । রসাবিষ্ট কবিচিত্ত হইতে উহার স্বত উৎসারিত হইয়া উঠে না। তাহা পৃথগ যত্ননির্বর্ত্য’। এইজন্য ধ্বনিবাদের প্রবর্তক আচার্য আনন্দবর্ধন পুনঃ পুন: ‘ধ্বনিকাব্যে’ বা উত্তমকাব্যে অনুপ্রাস প্রভৃতি বর্জন করিবার নির্দেশ দিয়াছেন। প্রকৃত বক্রোক্তি বা অলঙ্কার কবির চিন্তাধারারই অন্তরঙ্গ রূপ মাত্র । কিন্তু যে সকল অলঙ্কার উদ্ভাবনের জন্য কবিচিত্তের পৃথক্ অভিনিবেশ প্রয়োজন, তাহাদের সহিত কবির