পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের লক্ষণ ১ ৭ হইয়া উঠিলেন ? সংস্কৃত আলংকারিক আচার্য অভিনবগুপ্ত কাব্যরচনোন্মুখ মহাকবি বাল্মীকির চিত্তকে পরিপূর্ণ উচ্ছলিত কুম্ভের সহিত তুলন। করিয়াছেন। ক্ৰৌঞ্চবিরহকাতর চক্রবাকীর শোক বাল্মীকির কবিহদয়কে পূর্ণ, আলোড়িত করিয়াছিল—বর্ষাসমাগমে জলরাশি যেমন পরিপূর্ণ সরোবরবক্ষ আলোড়িত করিয়া তুলে। ক্ৰৌঞ্চপত্নীর অন্তর্গঢ় শোক মহর্ষি বাল্মীকির হৃদয়ে সংক্রান্ত হইয়াছিল এবং মহর্ষি বাল্মীকির উদ্বেলিত চিত্ত হইতে শোক শ্লোকাকারে উচ্ছলিত হইয়া পাঠকের হৃদয়কদের পরিপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছে—যেমন জলাশয় হইতে পরীবাহনিষ্ক্রান্ত জলধারা পাশ্ববর্তী পহুলরাজিকে পরিপূর্ণ করে । এই প্রকারে যক্ষের বিপ্ৰলম্ভব্যথা মহাকবি কালিদাসের অন্তরকে উদ্বেলিত করিয়া তুলিয়াছিল এবং কবি মেঘদূতের মন্দাক্রাস্তায় তাহার সেই উচ্ছলিত বিয়োগব্যথা শতধারায় প্রবাহিত করিয়া দিয়াছেন, পাঠকের চিত্তকে পরিপূর্ণ করিয়া তুলিবার জন্য । এই ভাবে একের চিত্তবৃত্তি অন্তে সংক্রান্ত হইয়াছে,—নায়কের চিত্তবৃত্তি কবিতে এবং কবি হইতে সহৃদয় পাঠকের হৃদয়ে । এক প্রদীপ হইতে বহ্নিশিখা যেমন অন্য প্রদীপে সঞ্চারিত হয়, ঠিক সেইরূপে “নায়কস্ত কবে; শ্রোতুঃ সমানোহমুভবস্তত:’ । এই প্রকারে নায়ক, কবি ও সহৃদয়ের মধ্যে যে চিত্তসাম্য বা ভাবসাহিত্য ঘটে, তাহাই কবিকর্মের সাহিত্য ব্যপদেশের মূলে। যেখানে এই ভাবসাহিত্য ঘটে নাই, সেখানে সাহিত্যের লক্ষণ অটুট থাকিতে পারে না,—যতই না কেন শব্দসম্পদ ও অর্থগৌরব সেখানে থাকুক। কেন না, কবিহীদয় সেখানে স্বতই অপূর্ণ রহিয়াছে, সহৃদয়ের চিত্ত পরিপূর্ণ করিবার মত রসসম্ভার তাহাতে সঞ্চিত হয় নাই। সুতরাং শব্দার্থগরিমা যে কেবল রিক্ত-কুম্ভের নিঃস্বন মাত্র হইবে,—তাহা যে উচ্ছলিত রসধারার গম্ভীর কল্লোল হইবে না, ইহাতে আশ্চর্য কি ? সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যমীমাংসক ‘হৃদয়দপণ-কার আচার্য ভট্টনায়ক সেইজন্য যথার্থই বলিয়াছেন, “যাবৎ পূর্ণে ন চৈতেন তাবল্লৈব বমত্যমুম"। আধুনিক বিখ্যাত সমালোচক