পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ সাহিত্য-মীমাংসা পরিগ্রহ করে। এই শব্দকে পৃথক করিয়া লইলে কবিত্ব অশরীরী আত্মার ন্যায় অপ্রত্যক্ষ, অগম্য, অকুপলভ্য। এইজন্যই প্রাচীন আলংকারিক আচার্য দওঁী বলিয়াছেন,—‘শরীরং তাবদিষ্টার্থ-ব্যবচ্ছিন্ন পদাবলী ।” অনেকের মতে শব্দ শুধু কাব্যের শরীর নহে,—অর্থবোধক শব্দসমষ্টি হইতে ব্যতিরিক্ত কাব্যবস্তুর পৃথক চৈতন্য বা আত্মা বলিয়া আর কিছুই নাই। যেমন, ভূতচৈতন্যবাদী লোকায়তিকগণের মতে মহাভূতসমষ্টি হইতেই প্রাণিচৈতন্যের উদ্ভব, বিজ্ঞানমাত্রসার আত্মবস্তুর অন্য কোনও পৃথক সত্তাই নাই । কাব্যবস্তুর চৈতন্য বা আত্মার পৃথক অস্তিত্ব আছে কি না,—সে প্রশ্নের পরবর্তী আলোচনায় মীমাংসা করা যাইবে । কিন্তু ইহা ঠিক, শরীরকে বাদ দিয়া আত্মার কোনও নিরাকার অস্তিত্ব সাধারণ বুদ্ধির অগোচর ; পালিভাষায় রচিত ‘মিলিন্দপঞ হো’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থে মহারাজ মিলিন্দ ও ভদন্ত নাগসেনের মধ্যে একটি সংলাপ লিপিবদ্ধ আছে । ভদন্ত নাগসেন সেখানে মহারাজ মিলিন্দকে প্রশ্ন করিতেছেন, মহারাজ ! আপনি যে রথে আরোহণ করিয়া আমার এই আশ্রমে উপনীত হইলেন, সেই রথ কি প্রকার ? মহারাজ, ঈষাই কি কেবলমাত্র রথ ? অথবা কেবল অক্ষ, অথবা চক্রসমূহ, অথবা রথদও, কিংবা তাহদের সমষ্টি ? মহারাজ উত্তর করিলেন, ভদন্ত নাগসেন, ইহার এক-একটি রথ নয়, ইহাদের সমষ্টিরও রথসংজ্ঞা নয়। নাগসেন জিজ্ঞাসা করিলেন, তবে কি মহারাজ ! ঈষা, অক্ষ, চক্র, রথদণ্ড এবং ইহাদের সমষ্টি ব্যতিরিক্ত অন্য কোনও বস্তু রথ বলিয়া আপনার ইন্দ্রিয়গোচর হইয়া থাকে ? মিলিন্দ কহিলেন, তাহাও নহে। নাগসেন তখন ঈষৎ পরিহাসচ্ছলে রাজাকে উদ্দেশ করিয়া কহিলেন, মহারাজ ! তবে কি আপনি রথে আরোহণ করিয়া আমার আশ্রমে আসেন নাই ? মহারাজ মিলিন্দ তখন নির্বাক । 2. "...If we take from a poem its metre, its rhythm, and its words, poetical thought does not, as some opine, remain behind : there remains nothing. Poetry is born as those words, that rhythm, and that metre,” Benedetto Croce : Tke Essence of Aesthetic, p. 43