পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও রসতত্ত্ব পরস্পর-অসংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ পদার্থ বলিয়া প্রতিভাত হয়। কিন্তু জড় (matter) ও চৈতন্তের (spirit, mind) মধ্যে এই শাশ্বত দ্বন্দ্বের সমন্বয়সাধনই সমস্ত দর্শনের চরম লক্ষ্য । দার্শনিক পণ্ডিতগণের মনীষা এই দুরূহ সমস্যার সমাধানের জন্যই নিয়োজিত হইয়াছে। জড় ও চৈতন্যের পৃথক ও সমান্তরাল (parallel) সত্তা স্বীকার করিয়া লইলেও উহাদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্বন্ধ স্বীকার না করিয়া উপায় নাই। সে সম্বন্ধের নাম, কার্যকারণভাব (causality) । চন্দ্রোদয়দর্শনে আমাদের চিত্ত উদ্বেলিত হইয়া উঠে, সমুদ্রবক্ষের মত স্ফীত হইয়া উঠে , জনহীন মরু-প্রশস্তর আমাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করে ; অসংখ্যনক্ষত্রমালাবিভূষিত ছায়াপথখণ্ডিত শারদাকাশের সীমাহীন গভীরতা আমাদের চিত্ত বিহ্বল করিয়া তুলে, আমরা বিধাতার বিশ্বস্বষ্টির নিগুঢ় রহস্য উপলব্ধি করিতে ন পারিয়৷ স্তম্ভিত হই, বিস্মিত হই । এই সমস্তই মানবপ্রকৃতির উপর জড়জগতের স্বদর-প্রসারী প্রভাবের নিদর্শন। জড়প্রকৃতির এই দুষ্প্রতিরোধ লীলাকে লক্ষ্য করিয়াই প্রসিদ্ধ সাহিত্যমীমাংসক আচার্য অভিনবগুপ্ত বলিয়াছেন—“অয়ি জড়প্রকৃতি ! তুমি তোমার প্রকৃত সত্তাকে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া জনগণের হৃদয়কে লইয়া নান ভঙ্গিতে ক্রীড়া কর, তাহাকে আলক্ষ্যে আক্রমণ করিয়া কত বিবিধ বিলাসে নাচাইতে থাক ! অথচ বিশ্বের জনসমাজ নিজের সহৃদয়তার অভিমানে তোমাকেই ‘জড়’, ‘অচেতন’ বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকে । আমার মনে হয়, ইহাই সমীচীন, কেন না, জনসমাজই প্রত্যুত জড় । সুতরাং তাহদের যদি জড় এই আখ্যার দ্বার নির্দেশ করা হইত, তবে তোমার সহিত তাহারা সমান হইয়া উঠিত । উহাতে কেবল তাহদের স্তুতিই হইত, নিন্দ নয়।” আবার কাহাকেও দেখিয়া হয়তো আমরা কুপিত হই, কাহাকেও দেখিয়া আমাদের হৃদয়ে স্নেহের প্রবাহ বহিতে থাকে। অতএব আমাদের বিভিন্ন পরিবর্তনশীল চিত্তবৃত্তি এই সকল জড়জগতেরই কার্য, জড়প্রকৃতি উহার কারণ। এই সকল কারণকলাপই যখন কবি র্তাহার প্রতিভাবলে কাব্যে বর্ণনা করেন,