পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-মীমাংসা واوڼ আমরা দেখিলাম, ভট্টলোল্লট এবং ভট্টশঙ্কুক—রসস্থত্রের এই দুইজন পূর্ববর্তী ব্যাখ্যাত, তাহদের কাহারও মতবাদেই সহৃদয়ের আনন্দময় অনুভূতির সন্তোষজনক বিশ্লেষণ দৃষ্টিগোচর হয় না। ভট্টলোল্লটের মতে মুখ্য রসের আধার অমুকার্য দুৰ্য্যন্ত প্রভৃতি নায়ক, এবং সহৃদয় অমুকৰ্তা নটে ওই স্থায়িভাবের আরোপ করিয়া উহার অলৌকিক সাক্ষাৎকারের বলে আনন্দ অনুভব করে। ইহা যে সামাজিকগণের সম্পূর্ণ অনুভববিরুদ্ধ, তাহা আমরা পূর্বেই বলিয়াছি। পরের মুখ দেখিয়া তটস্থ ব্যক্তির কোন আনন্দই জন্মলাভ করিতে পারে না । আচার্য শঙ্কক যদিও অভিনেতা নটের স্বরূপ বর্ণনায় অতি স্বক্ষ বিশ্লেষণশক্তির পরিচয় দিয়াছেন বটে, তবুও নটনিষ্ঠ স্থায়িভাবের অকুমানেই সামাজিকগণের অলৌকিক আনন্দাচুভূতি আত্মলাভ করে— র্তাহার এইরূপ কল্পনাও সন্তোষজনক নহে । তাহাব মতেও সামাজিক কেবল তটস্থ, নিরপেক্ষ দর্শক মাত্র । তাহার সহিত স্থায়িভাবের কোনই সম্বন্ধ নাই । সে শুধু উদাসীন দ্রষ্টা মাত্র। পরের মুখ অনুমান করিয়াই তাহার আনন্দ । এই সিদ্ধাস্তটিও রসামুভূতির প্রকৃতস্বরূপ উদ্‌ঘাটন করিতে সমর্থ হয় নাই । আবার রসের অনুভূতি যে নিতান্তই ব্যক্তিগত (personal), সহৃদয় দশকের একান্তভাবে আত্মগত, ইহাও বলা যায় না । সহৃদয় কি এইরূপ অমুভব করে যে, এই যে অমুভূতি, ইহ। কেবল আমারই, আর কাহারও নহে ? অনুভবের এই পরিমিতত্ব (limitedness), এইরূপ দ্বৈপায়ন চিত্তবৃত্তি বা insularity— কি সাহিত্যবসের ক্ষেত্রে সম্ভব ? তাহা হইলে, লৌকিক চিত্তবৃত্তির সহিত সাহিত্যপাঠ বা নাট্যদর্শনজনিত অনুভূতির তফাত রহিল কোথায় ? ব্যাবহারিক জগতের যে সকল অনুভূতি, সে সকলের মূলেই তো “অহংতা’ (egoism) চিরবিজড়িত হইয়া রহিয়াছে, উহা তো একান্তভাবে আত্মকেন্দ্রিক Ti egocentric ! সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যদি সহৃদয় আত্মার এই অবিদ্যারচিত সংকীর্ণতা,—‘নিজের গড়া মিথ্যার প্রাচীর’ লঙ্ঘন করিতে না পারে, তবে কবিকল্পিত বিশ্বের সহিত জড়জগতের ভেদ রহিল কোথায় ? একটি