পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
আলোচনা
১৯৫

প্রবন্ধের সৃষ্টি হয়, মানুষের হাতের কাজের মতো হয় না। সেরকম আঁটা-আঁটি প্রবন্ধের বিশেষ আবশ্যক আছে এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না; কিন্তু সর্বত্র তারই বড়ো বাহুল্য দেখা যায়। সেগুলো পড়লে মনে হয় যেন সত্য তার সমস্ত সুসংলগ্ন যুক্তিপরম্পরা নিয়ে একেবারে সম্পূর্ণভাবে কোথা থেকে আবির্‌ভূত হল। মানুষের মনের মধ্যে সে যে মানুষ হয়েছে, সেখানে তার যে আরো অনেকগুলি সমবয়সী সহোদর ছিল, একটি বৃহৎ বিস্তৃত মানসপুরে যে তার একটি বিচিত্র বিহারভূমি ছিল, লেখকের প্রাণের মধ্যে থেকেই সে যে প্রাণ লাভ করেছে, তা তাকে দেখে মনে হয় না; এমন মনে হয় যেন কোনো ইচ্ছাময় দেবতা যেমন বললেন ‘অমুক প্রবন্ধ হউক’ অমনি অমুক প্রবন্ধ হল: লেট দেয়ার বি লাইট অ্যাণ্ড্‌ দেয়ার ওআজ লাইট। এইজন্য তাকে নিয়ে কেবল আমাদের মাথার খাটুনি হয়, কেবলমাত্র মগজ দিয়ে সেটাকে হজম করবার চেষ্টা করা হয়; আমাদের মানসপুরে যেখানে আমাদের নানাবিধ জীবন্ত ভাব জন্মাচ্ছে খেলছে এবং বাড়ছে সেখানে তার স্বর পরিচিতভাবে প্রবেশ করতে পারে না; প্রস্তুত হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে হয়, সাবধান হয়ে তার সঙ্গে কথা কইতে হয়; তার সঙ্গে কেবল আমাদের একাংশের পরিচয় হয় মাত্র, ঘরের লোকের মতো সর্বাংশের পরিচয় হয় না।

 ম্যাপে এবং ছবিতে অনেক তফাত। ম্যাপে পার্‌স্‌‌পেক্‌‌টিভ থাকতে পারে না; দূর নিকটের সমান ওজন, সর্বত্রই অপক্ষপাত; প্রত্যেক অংশকেই সূক্ষ্মবিচারমত তার যথাপরিমাণ স্থান নির্দেশ করে দিতে হয়। কিন্তু ছবিতে অনেক জিনিস বাদ পড়ে; অনেক বড়ো ছোটো হয়ে যায়; অনেক ছোটো বড়ো হয়ে ওঠে। কিন্তু তবু ম্যাপের চেয়ে তাকে সত্য মনে হয়, তাকে দেখবামাত্রই এক মুহূর্তে আমাদের সমস্ত চিত্ত তাকে চিনতে পারে। আমরা চোখে যে ভুল দেখি তাকে সংশোধন করতে গেলে ছবি হয় না, ম্যাপ হয়, তাকে মাথা খাটিয়ে আয়ত্ত করতে হয়। কিন্তু