পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৯৬
সাহিত্য

এইরকম আংশিক চেষ্টা ভারী শ্রান্তিজনক। যাতে আমাদের সমস্ত প্রকৃতি উৎসাহের সঙ্গে যোগ দেয় না, পরস্পরের ভার লাঘব করে না, নিজ নিজ অংশ বণ্টন করে নেয় না, তাতে আমাদের তেমন পরিপুষ্টি-সাধন হয় না। যে কারণে খনিজ পদার্থের চেয়ে প্রাণিজ পদার্থ আমরা শীঘ্র গ্রহণ এবং পরিপাক করতে পারি, সেই কারণে একেবারে অমিশ্র খাঁটি সত্য কঠিন যুক্তি-আকারে আমাদের অধিকাংশ পাকযন্ত্রের পক্ষেই গুরুপাক। এইজন্য সত্যকে মানবের জীবনাংশের সঙ্গে মিশ্রিত করে দিলে সেটা লাগে ভালো।

 সেই কাজ করতে গেলেই প্রথমত একটা সত্যকে এক দমে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আগাগোড়া দেওয়া যায় না। কারণ, অধিকাংশ সত্যই আমরা মনের মধ্যে আভাসরূপে পাই এবং তার পশ্চাতে আমাদের মাথাটাকে প্রেরণ করে গ’ড়ে পিটে তার একটা আগা-গোড়া খাড়া করে তুলতে চেষ্টা করি। সেটাকে বেশ একটা সংগত এবং সম্পূর্ণ আকার না দিলে একটা চলনসই প্রবন্ধ হল না, মনে করি। এইজন্যে নানাবিধ কৃত্রিম কাঠ খড় দিয়ে তাকে নিয়ে একটা বড়োগোছের তাল পাকিয়ে তুলতে হয়।

 আমি ইংরিজি কাগজ এবং বইগুলো যখন পড়ি তখন অধিকাংশ সময়েই আমার এই কথা মনে হয় যে, একটা কথাকে একটা প্রবন্ধ কিম্বা একটা গ্রন্থে পরিণত করতেই হবে এই চেষ্টা থাকাতে প্রতিদিনকার ইংরাজি সাহিত্যে যে কত বাজে বকুনির প্রাদুর্ভাব হয়েছে তার আর সংখ্যা নেই—এবং সত্যটুকুকে খুঁজে বের করা কত দুঃসাধ্য হয়েছে! যে কথাটা বলা হচ্ছে সেটা আসলে কত সহজ এবং সংক্ষিপ্ত, সেটাকে না-হক কত দুরূহ এবং বৃহৎ করে তোলা হয়! আমার বোধ হয় ইংরাজি সাহিত্যের মাপকাঠিটা বড়ো বেশি বেড়ে গেছে—তিন ভল্যুম না হলে নভেল হয় না এবং মাসিক-পত্রের এক-একটা প্রবন্ধ দেখলে ভয় লাগে। আমার বোধ