পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
আলোচনা
১৯৯

ভাবনা কী ছিল!

 আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় না আমরা জ্ঞানতঃ কিম্বা অজ্ঞানতঃ মানুষকেই সব চেয়ে বেশি গৌরব দিয়ে থাকি? আমরা যদি কোনো সাহিত্যে অনেকগুলো ভ্রান্ত মতের সঙ্গে একটা জীবন্ত মানুষ পাই সেটাকে কি চিরস্থায়ী করে রেখে দিই নে? জ্ঞান পুরাতন এবং অনাদৃত হয়, কিন্তু মানুষ চিরকাল সঙ্গদান করতে পারে। সত্যকার মানুষ প্রতিদিন যাচ্ছে এবং আসছে; তাকে আমরা খণ্ড খণ্ড ভাবে দেখি এবং ভুলে যাই, এবং হারাই। অথচ মানুষকে আয়ত্ত করবার জন্যেই আমাদের জীবনের সর্বপ্রধান ব্যাকুলতা। সাহিত্যে সেই চঞ্চল মানুষ আপনাকে বদ্ধ করে রেখে দেয়; তার সঙ্গে আপনার নিগূঢ় যোগ চিরকাল অনুভব করতে পারি। জীবনের অভাব সাহিত্যে পূরণ করে। চিরমনুষ্যের সঙ্গ লাভ ক’রে আমাদের পূর্ণ মনুষ্যত্ব অলক্ষিতভাবে গঠিত হয়—আমরা সহজে চিন্তা করতে, ভালোবাসতে এবং কাজ করতে শিখি। সাহিত্যের এই ফলগুলি তেমন প্রত্যক্ষগোচর নয় ব’লে অনেকে একে শিক্ষার বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্ট আসন দিয়ে থাকেন, কিন্তু আমার বিশ্বাস, সাধারণতঃ দেখলে বিজ্ঞান-দর্শন-ব্যতীতও কেবল সাহিত্যে একজন মানুষ তৈরি হতে পারে, কিন্তু সাহিত্য-ব্যতিরেকে কেবল বিজ্ঞান-দর্শনে মানুষ গঠিত হতে পারে না।

 কিন্তু আমি তোমাকে কী বলছিলুম, সে কোথায় গেল! আমি বলছিলেম, কোনো-একটা বিশেষ প্রসঙ্গ নিয়ে তার আগাগোড়া তর্ক নাই হল। তার মীমাংসাই বা নাই হল। কেবল দুজনের মনের আঘাত-প্রতিঘাতে চিন্তাপ্রবাহের মধ্যে বিবিধ ঢেউ তোলা, যাতে করে তাদের উপর নানা বর্ণের আলোছায়া খেলতে পারে, এই হলেই বেশ হয়। সাহিত্যে এরকম সুযোগ সর্বদা ঘটে না, সকলেই সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ মত প্রকাশ করতেই ব্যস্ত—এইজন্যে অধিকাংশ মাসিক পত্র মৃত মতের মিউজিয়াম বললেই হয়। মত-সকল জীবিত অবস্থায় যেখানে নানা ভঙ্গিতে সঞ্চরণ