পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাহিত্যসম্মিলন
২৫৫

ও আতিথ্যকেই সর্বাগ্রে স্বীকার করিয়া লইয়া আজিকার কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত।

 তার পরে কথা এই, কাজটা কী? বরিশালের নিমন্ত্রণপত্রে ঘোষণা করা হইয়াছিল যে, সভার উদ্দেশ্য সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রীতিস্থাপন ও মাতৃভাষার উন্নতিসাধন। এই দুটি উদ্দেশ্যের দিকে হাল বাগাইয়া চলিতে হইবে। কিন্তু পথটি তো সোজা নয়। সভাস্থাপন করিয়া প্রীতিস্থাপন হয়, বাংলাদেশে তাহার প্রমাণ তো সর্বদা পাওয়া যায় না; বরঞ্চ উল্টা হয় এমন দৃষ্টান্ত অনেক দেখানো যাইতে পারে। প্রীতিবিধান ও উন্নতিসাধন, জগতে এ দুটি বই আর তো সাধু উদ্দেশ্য নাই। এ দুটির সহজপথ-আবিষ্কার-চেষ্টায় ধরাতল বারংবার অশ্রু এবং রক্তে অভিষিক্ত হইয়াছে, তবু আজও এক ব্রতের ব্রতী, এক ব্যবসায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঈর্ষা-কলহের অন্ত নাই—আজও উন্নতি-অবনতি চাকার মতো আবর্তিত হইতেছে এবং সংসারের উন্নতির জন্য চেষ্টা করিতেছে অগণ্য লোক এবং তাহার ফল ভোগ করিতেছে কয়েকজন ভাগ্যবান্‌ মাত্র।

 কিন্তু আসল কথা, অনেক বিদ্যালয় চিকিৎসালয় প্রভৃতি ব্যাপারের যেমন বড়ো বড়ো নামধারী মুরুব্বি থাকেন, অনুষ্ঠানপত্রের সর্বোচ্চ তাঁহাদের নামটা ছাপা থাকে, কিন্তু কোনো কাজেই তাঁহারা লাগিবেন বলিয়া কেহ আশাও করে না, তেমনি কোনো অনুষ্ঠানের গোড়ায় উদ্দেশ্য বলিয়া মস্ত বড়ো কোনো-একটা কথা সকলের উপরে আমরা লিখিয়া রাখি, মনে মনে জানা থাকে ওটা ঐখানে অমনি লেখাই রহিল। প্রীতি-স্থাপনের উদ্দেশ্যটাকেও তেমনি সর্বোচ্চে স্বীকার করিয়া লইয়া তাহার পরে তাহার প্রতি মনোযোগ না করিলেও বোধ করি কেহই লক্ষ করিবে না।

 অতএব এই সম্মিলনসভার উদ্দেশ্য কী তাহা লইয়া বৃথা আলোচনা না করিয়া, ইহার কারণটা কী, সেটা দেখা যাইতে পারে।

 সাহিত্যসম্মিলনের নামে বাংলার নানা প্রদেশের লোক বরিশালে