পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬৬
সাহিত্য

পাই। বাঙালি হইয়া বাঙালিকে, পিতাভ্রাতা-আত্মীয়স্বজনকে ইংরেজিতে পত্র লেখা যে কতবড়ো লাঞ্ছনা তাহা আমরা অনুভবমাত্র করি না; আমরা যখন অসংযত করতালিদ্বারা স্বদেশী বক্তাকে এবং হিপ্‌ হিপ্‌ হুর্‌রে ধ্বনিতে স্বদেশী মান্যব্যক্তিকে উৎসাহ জানাইয়া থাকি তখন সেই কর্ণকটু বিজাতীয় বর্বরতায় আমরা কেহ সংকোচমাত্র বোধ করি না; যে-সকল অশ্রদ্ধাপরায়ণ পরদেশীর কোনো-প্রকার আমোদ-আহ্লাদে সমাজকৃত্যে আমাদের কোনোদিন কোনো আদর কোনো আহ্বান নাই তাহাদিগকে আমাদের দেবপূজায় ও বিবাহাদি শুভকর্মে গড়ের বাদ্য -সহকারে প্রচুর মদ্যমাংস সেবন করানোকে উৎসবের অঙ্গ বলিয়া আমরা গণ্য করি—ইহার বীভৎসতা আমাদের হৃদয়ের কোথাও বাজে না। তেমনি আমরা আজ অন্তত বিশ-পঁচিশ বৎসর পরের সিংহদ্বারে মুষ্টিভিক্ষার জন্য প্রতিদিন নিষ্ফল যাত্রা করিয়া নিজেকে দেশহিতৈষী বলিয়া নিঃসংশয়ে স্থির করিয়াছি, অথচ দেশের দিকে একবার ফিরিয়াও তাকাই না, ইহাও একটা অজ্ঞানকৃত প্রহসন। দেশের বিবরণ জানিতে—তাহার ভাষা ভূগোল ইতিবৃত্ত জীবজন্তু উদ্ভিদ মনুষ্য—তাহার কথাকাহিনী ধর্মসাহিত্য সম্বন্ধে সমস্ত রহস্য স্বচেষ্টায় উদ্‌ঘাটন করিতে লেশমাত্র উৎসাহ বা কৌতুহল অনুভব করি না। যে দেশকে আক্রমণ করিতে হইবে সে দেশের সমস্ত তথ্যানুসন্ধান করা শত্রুপক্ষের কত আবশ্যক তাহা আমরা জানি; আর, যে দেশের হিতসাধন করিতে হইবে সেই দেশকেই কি জানার কোনো প্রয়োজন নাই?

 কিন্তু প্রয়োজনের কথা কেন তুলিব? যাঁহারা দেশ শাসন করেন তাঁহারা প্রয়োজনের গরজে দেশের বৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন, আর যাঁহারা দেশকে ভালোবাসেন বলিয়া থাকেন তাঁহাদের কি ভালোবাসার গরজ নাই? তাঁহারা কি দেশের অন্তঃপুরে নিজে প্রবেশ করিবেন না? সেখানকার সমস্ত সংবাদের জন্য থর্‌ন্‌টন-হাণ্টারের মুখের দিকে নিতান্ত নির্লজ্জভাবে নিরুপায় নির্বোধের মতো তাকাইয়া থাকিবেন?