পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৮৬
সাহিত্য

তন্ন করিয়া, জানিতেছে। না জানিলে দেশের কাজ করা যায় না। শুধু তাই নয়, এই জানিবার চর্চাই ভালোবাসার চর্চা। দেশের ছোটোবড়ো সমস্ত বিষয়ের প্রতি সচেতন দৃষ্টি প্রয়োগ করিলেই তবে সে আমার আপন ও আমার পক্ষে সত্য হইয়া উঠে। নইলে দেশহিত সম্বন্ধে পুঁথিগত শিক্ষা লইয়া আমরা যে-সকল বড়ো বড়ো কথা বার্ক্‌-মেকলের ভাষায় আবৃত্তি করিতে থাকি সেগুলো বড়োই বেসুরো শোনায়।

 তাই দেশের ভাষা পুরাবৃত্ত সাহিত্য প্রভৃতি সকল দিক দিয়া দেশকে জানিবার জন্য সাহিত্যপরিষৎ প্রবৃত্ত হইয়াছেন। বাংলাদেশের সকল জেলাই যদি তাঁহার সঙ্গে সচেষ্টভাবে যোগ দেন তবেই তাঁহার উদ্দেশ্য সফল হইবে। সফলতা দুই দিক দিয়াই হইবে—এক, যোগের সফলতা; আর-এক, সিদ্ধির সফলতা। আজ বরিশাল ও বহরমপুর যে আমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, ইহাতে মনে মনে আশা হইতেছে আমাদের বহু দিনের চেষ্টার সার্থকতা আসন্ন হইয়া আসিয়াছে।

 দীপশিখা জ্বালিবার দুইটা অবস্থা আছে। তাহার প্রথম অবস্থা চক্‌মকি ঠোকা। সাহিত্যপরিষৎ কাজ আরম্ভ করিয়া প্রথম কিছুদিন চক্‌মকি ঠুকিতেছিল, তাহাতে বিচ্ছিন্নভাবে স্ফুলিঙ্গ বাহির হইতেছিল। দেশে বুঝি তখনো পলিতা পাকানো হয় নাই, অর্থাৎ দেশের হৃদয়গুলি এক প্রান্ত হইতে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত এক সূত্রে পাকাইয়া ওঠে নাই। তার পরে স্পষ্টই দেখিতেছি, আমাদের দেশে হঠাৎ একটা শুভদিন আসিয়াছে-যেমন করিয়াই হউক, আমাদের হৃদয়ে হৃদয়ে একটা যোগ হইয়াছে—তাহা হইবামাত্র দেশের যেখানে যেকানো আশা ও যে-কোনো কর্ম মরো-মরো হইয়াছিল তাহারা সকলেই যেন একসঙ্গে রস পাইয়া নবীন হইয়া উঠিয়াছে। সাহিত্যপরিষদ্‌ও এই অমৃতের ভাগ হইতে বঞ্চিত হয় নাই। এইবার তাহার বিক্ষিপ্ত স্ফুলিঙ্গ যদি শুভদৈবক্রমে পলিতার মুখে ধরিয়া উঠে তবে একটি অবিচ্ছিন্ন শিখারূপে দেহের অন্তঃপুরকে সে