পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
সাহিত্য

দুঃখিনী বঙ্গভূমি সেই পুত্র কামনা করিতেছিল।

 আমাদের দেশমাতাকে বহুপুত্রবতী হইতে হইবে। এই পুত্রদের কেহ বা দেশের জ্ঞানকে, কেহ বা দেশের ভাবকে, কেহ বা দেশের কর্মকে অনুবৃত্তি দান করিয়া তাহাকে উত্তরােত্তর পরিপূর্ণ করিয়া তুলিবে। তাহারা নানা লােকের উদ্যমকে এক স্থানে আকর্ষণ করিয়া লইবে, তাহারা নানা কালের চেষ্টাকে একত্রে বাঁধিয়া চলিবে। তাহারা দেশের চিত্তকে নানা ব্যক্তির মধ্যে ব্যাপ্ত করিয়া দিবে এবং অনাগত কালের মধ্যে বহন করিয়া। চলিবে। এমনি করিয়াই দেশের বন্ধ্যা অবস্থার সংকীর্ণতা ঘুচিয়া যাইবে, সে জ্ঞানে প্রেমে কর্মে সকল দিকেই পরিপূর্ণ হইয়া উঠিবে।

 এইরূপ পুত্রের জন্য বঙ্গভূমির কামনা জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে, পুত্রেষ্টিযজ্ঞ আরম্ভ হইয়াছে।

 বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎকে আমি দেশমাতার এইরূপ একটি পুত্র বলিয়া অনুভব করিয়া অনেক দিন হইতে আনন্দ পাইতেছি। ইহা একটি বিশেষ দিকে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতা ঘুচাইয়া তাহাকে সম্পূর্ণতা দান করিবার জন্য অবতীর্ণ হইয়াছে। তাহা বাংলাদেশের আত্মপরিচয়চেষ্টাকে এক জেলা হইতে অন্য জেলায় ব্যাপ্ত করিয়া দিবে, এক কাল হইতে অন্য কালে বহন করিয়া চলিবে—তাহার এক নিত্যপ্রসারিত জিজ্ঞাসাসূত্রের দ্বারা অদ্যকার বাঙালির চিত্তের সহিত দূরকালের বাঙালিচিত্তকে মালায় গাঁথা চলিবে— দেশের সঙ্গে দেশের, কালের সঙ্গে কালের যােগসাধন করিয়া পরিপূর্ণতা বিস্তার করিতে থাকিবে। পুত্র পিতৃবংশকে, পিতৃকীর্তিকে, পিতৃসাধনাকে এইরূপে ভবিষ্যতের অভিমুখে অগ্রসর করিয়া দিয়া অতীতের সহিত অনাগতকে এক করিয়া মানুষকে কৃতার্থ করে; দেশপুত্রও দেশের চিত্তকে, দেশের চেষ্টাকে, বৃহৎ দেশে, বৃহৎ কালে ঐক্য দান করিয়া তাহাকে সত্য করে— তাহাকে চরিতার্থ করে। সাহিত্যপরিষৎও বাংলাদেশের চিত্তকে এইরূপ নিত্যতা দান করিয়া তাহাকে মহৎরূপে সত্য করিয়া