পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬০
সাহিত্য

হইল। তাহার মধ্যে সুন্দর ভাষায় সুরচিত নৈপুণ্যে আমার প্রীতিকে প্রকাশ করিতেই সে মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী হইয়া উঠিল। সে আর এই সংসারের আনাগোনার স্রোতে ভাসিয়া গেল না।

 এমনি করিয়া, বাহিরের যে-সকল অপরূপ প্রকাশ, তাহা সূর্যোদয়ের ছটা হউক বা মহৎ চরিত্রের দীপ্তি হউক বা নিজের অন্তরের আবেগ হউক, যাহা-কিছু ক্ষণে ক্ষণে আমাদের হৃদয়কে চেতাইয়া তুলিয়াছে হৃদয় তাহাকে নিজের একটা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত করিয়া আপনার বলিয়া তাহাকে আঁকড়িয়ে রাখে। এমনি করিয়া সেই-সকল উপলক্ষে সে আপনাকেই বিশেষ করিয়া প্রকাশ করে।

 সংসারে মানুষ যে আপনাকে প্রকাশ করিতেছে সেই প্রকাশের দুইটি মোটা ধারা আছে। একটা ধারা মানুষের কর্ম, আর-একটা ধারা মানুষের সাহিত্য। এই দুই ধারা একেবারে পাশাপাশি চলিয়াছে। মানুষ আপনার কর্মরচনায় এবং ভাবরচনায় আপনাকে ঢালিয়া দিয়াছে। ইহারা উভয়ে উভয়কে পূরণ করিতে করিতে চলিয়াছে। এই দুয়ের মধ্য দিয়াই ইতিহাসে ও সাহিত্যে মানুষকে পুরাপুরি জানিতে হইবে।

 কর্মক্ষেত্রে মানুষ তাহার দেহ মন হৃদয়ের সমস্ত শক্তি ও অভিজ্ঞতা লইয়া গৃহ সমাজ রাজ্য ও ধর্মসম্প্রদায় গড়িয়া তুলিতেছে। এই গড়ার মধ্যে মানুষ যাহা জানিয়াছে, যাহা পাইয়াছে, যাহা চায়, সমস্তই প্রকাশ পাইতেছে। এমনি করিয়া মানুষের প্রকৃতি জগতের সঙ্গে জড়াইয়া গিয়া নানাপ্রকার রূপ ধরিয়া সকলের মাঝখানে আপনাকে দাঁড় করাইয়া তুলিতেছে। এমনি করিয়া, যাহা ভাবের মধ্যে ঝাপসা হইয়া ছিল ভবের মধ্যে তাহা আকারে জন্ম লইতেছে, যাহা একের মধ্যে ক্ষীণ হইয়া ছিল তাহা অনেকের মধ্যে নানা-অঙ্গ-বিশিষ্ট বড়ো ঐক্য পাইতেছে। এইরূপে ক্রমে এমন হইয়া উঠিতেছে যে প্রত্যেক স্বতন্ত্র মানুষ এই বহুদিনের ও বহুজনের গড়া ঘর সমাজ রাজ্য ও ধর্মসম্প্রদায়ের ভিতর দিয়া ছাড়া