পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিশ্বসাহিত্য
৬০

নিজেকে স্পষ্ট করিয়া পূরা করিয়া প্রকাশ করিতেই পারে না। এই সমস্তটাই মানুষের কাছে মানুষের প্রকাশরূপ হইয়া উঠিয়াছে। এমন অবস্থা না হইলে তাহাকে আমরা সভ্যতা অর্থাৎ পূর্ণমনুষ্যত্ব বলিতেই পারি না। রাজ্যেই বলো, সমাজেই বলো, যে ব্যাপারে আমরা এক-একজন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, একের সঙ্গে সকলের যোগ নাই, সেইখানেই আমরা অসভ্য। এইজন্য সভ্যসমাজে রাজ্যে আঘাত লাগিলে সেই রাজ্যের প্রত্যেক লোকের বৃহৎ কলেবরটাতে আঘাত লাগে; সমাজ কোনো দিকে সংকীর্ণ হইলে সেই সমাজের প্রত্যেক লোকের আত্মবিকাশ আচ্ছন্ন হইতে থাকে। মানুষের সংসারক্ষেত্রের এই-সমস্ত রচনা যে পরিমাণে উদার হয় সেই পরিমাণে সে আপনার মনুষ্যত্বকে অবাধে প্রকাশ করিতে পারে। যে পরিমাণে সেখানে সংকোচ আছে প্রকাশের অভাবে মানুষ সেই পরিমাণে সেখানে দীন হইয়া থাকে; কারণ, সংসার কাজের উপলক্ষ্য করিয়া মানুষকে প্রকাশেরই জন্য এবং প্রকাশই একমাত্র আনন্দ।

 কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মানুষ এই-যে আপনাকেই প্রকাশ করে এখানে প্রকাশ করাটাই তাহার আসল লক্ষ্য নয়, ওটা কেবল গৌণফল। গৃহিণী ঘরের কাজের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করেন বটে, কিন্তু প্রকাশ করাটাই তাঁহার মনের স্পষ্ট উদ্দেশ্য নয়। গৃহকর্মের ভিতর দিয়া তিনি তাঁহার নানা অভিপ্রায় সাধন করেন; সেই-সকল অভিপ্রায় কাজের উপর হইতে ঠিক্‌রাইয়া আসিয়া তাহার প্রকৃতিকে আমাদের কাছে বাহির করিয়া দেয়।

 কিন্তু সময় আছে যখন মানুষ মুখ্যতই আপনাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করে। মনে করো, যেদিন ঘরে বিবাহ সেদিন এক দিকে বিবাহের কাজটা সারিবার জন্য আয়োজন চলিতে থাকে, আবার অন্য দিকে শুধু কাজ সারা নহে, হৃদয়কে জানাইয়া দিবারও প্রয়োজন ঘটে; সেদিন ঘরের লোক ঘরের মঙ্গলকে ও আনন্দকে সকলের কাছে ঘোষণা না করিয়া