পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সৌন্দর্য ও সাহিত্য
৭৭

ও পড়িয়া বিশ্বসংগীতের ছন্দ রচনা করিতেছে; সমগ্রভাবে দেখিলে এই ছন্দের কোথাও বিচ্ছেদ নাই, সৌন্দর্যের কোথাও লাঘব নাই। জগতের মধ্যে সৌন্দর্যকে এইরূপ সমগ্রভাবে দেখিতে শেখাই সৌন্দর্যবোধের শেষ লক্ষ্য। মানুষ তেমনি করিয়া দেখিবার দিকে যতই অগ্রসর হইতেছে তাহার আনন্দকে ততই জগতের মধ্যে প্রসারিত করিয়া দিতেছে; পূর্বে যাহা নিরর্থক ছিল ক্রমেই তাহা সার্থক হইয়া উঠিতেছে, পূর্বে সে যাহার প্রতি উদাসীন ছিল ক্রমে সে তাহাকে আপনার সঙ্গে মিলাইয়া লইতেছে, এবং যাহাকে বিরুদ্ধ বলিয়া জানিত তাহাকে বৃহতের মধ্যে দেখিয়া তাহার ঠিক স্থানটিকে দেখিতে পাইতেছে ও তৃপ্তিলাভ করিতেছে। বিশ্বের সমগ্রের মধ্যে মানুষের এই সৌন্দর্যকে দেখার বৃত্তান্ত, জগৎকে তাহার আনন্দের দ্বারা অধিকার করিবার ইতিহাস, মানুষের সাহিত্যে আপনা আপনি রক্ষিত হইতেছে।

 কিন্তু সৌন্দর্যকে অনেক সময় আমরা নিখিল-সত্য হইতে পৃথক করিয়া দেখি এবং তাহাকে লইয়া দল বাঁধিয়া বেড়াই, ইহা দেখিতে পাওয়া যায়। য়ুরোপে সৌন্দর্যচর্চা সৌন্দর্যপূজা বলিয়া একটা সাম্প্রদায়িক ধুয়া আছে। সৌন্দর্যের বিশেষ ভাবের অনুশীলনটা যেন একটা বিশেষ বাহাদুরির কাজ, এইরূপ ভঙ্গিতে একদল লোক তাহার জয়ধ্বজা উড়াইয়া বেড়ায়। স্বয়ং ঈশ্বরকেও এইরূপ নিজের বিশেষদলভুক্ত করিয়া, বড়াই করিয়া এবং অন্য দলের সঙ্গে লড়াই করিয়া বেড়াইতে মানুষকে দেখা গিয়াছে।

 বলা বাহুল্য, সৌন্দর্যকে চারি দিক হইতে বিশেষ করিয়া লইয়া জগতের আর-সমস্ত ডিঙাইয়া কেবল তাহার পশ্চাতে ছুটিয়া বেড়ানো সংসারের পনেরো-আনা লোকের কর্ম নহে। কেবলই সুন্দর-অসুন্দর বাঁচাইয়া জৈন তপস্বীদের মতো প্রতি পদক্ষেপের হিসাব লইয়া চলিতে গেলে চলাই হয় না।

 পৃথিবীতে, কী সৌন্দর্যে কী শুচিতায় যাহাদের হিসাব নিরতিশয় সূক্ষ্ম