পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সৌন্দর্য ও সাহিত্য
৮১

ঈশ্বরের খাঁটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনা করিয়ো না। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নাই এবং পরীক্ষার কোনো প্রয়োজনই নাই। সে বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র শিক্ষাই আছে। সেখানে কেবল বিকাশেরই ব্যাপার চলিতেছে। সেইজন্য, মানুষের মনে সৌন্দর্যবোধ যে এমন প্রবল হইয়াছে সে আমাদের বিকাশ ঘটাইবে বলিয়াই। বিপদ থাকে তো থাক্‌, তাই বলিয়া বিকাশের পথকে একেবারে পরিত্যাগ করিয়া চলিলে মঙ্গল নাই।

 বিকাশ বলিতে কী বুঝায় সে কথা পূর্বেই বলিয়াছি। সমগ্রের সঙ্গে প্রত্যেকের যোগ যত রকম করিয়া যতদূর ব্যাপ্ত হইতে থাকে ততই প্রত্যেকের বিকাশ। স্বর্গরাজ ইন্দ্র যদি আমাদের সেই যোগসাধনের বিঘ্ন ঘটাইবার জন্যই সৌন্দর্যকে মর্তে পাঠাইয়া দেন ইহা সত্য হয়, তবে ইন্দ্রদেবের সেই প্রবঞ্চনাকে দূর হইতে নমস্কার করিয়া দুই চক্ষু মুদিয়া থাকাই শ্রেয়, এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে।

 কিন্তু ইন্দ্রদেবের প্রতি আমার লেশমাত্র অবিশ্বাস নাই। তাঁহার কোনো দূতকেই মারিয়া খেদাইতে হইবে এমন কথা আমি বলিতে পারিব না। এ কথা নিশ্চয়ই জানি, সত্যের সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের প্রগাঢ় এবং অখণ্ড মিলন ঘটাইবার জন্যই সৌন্দর্যবোধ হাসিমুখে আমাদের হৃদয়ে অবতীর্ণ হইয়াছে। সে কেবল বিনা প্রয়োজনের মিলন, সে কেবলমাত্র আনন্দের মিলন। নীলাকাশ যখন নিতান্তই শুধু শুধু আমাদের হৃদয় দখল করিয়া সমস্ত শ্যামল পৃথিবীর উপর তাহার জ্যোতির্ময় পীতাম্বরটি ছড়াইয়া দেয় তখনই আমরা বলি, সুন্দর! বসন্ত গাছের নূতন কচি পাতা বনলক্ষ্মীদের আঙুলগুলির মতো যখন একেবারেই বিনা আবশ্যকে আমাদের দুই চোখকে ইঙ্গিত করিয়া ডাকিতে থাকে তখনই আমাদের মনে সৌন্দর্যরস উছলিয়া উঠে।

 কিন্তু সৌন্দর্যবোধ কেবল সুন্দর-নামক সত্যের একটা অংশের দিকেই আমাদের হৃদয়কে টানে ও বাকি অংশ হইতে আমাদের হৃদয়কে ফিরাইয়া