পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিরক্ষর কবি ও গ্রাম্য কবিতা । ১৩৫ [ ללטל 'ףף. “নলে গীত” আর “বারাসে গীতে” আকাশ পাতাল প্ৰভেদ। যাহায়া নলে-গীত রচয়িতা তাহারা ঈশ্বরভক্তি সংসারত্যাগী এক প্রকার নিষ্কাম সাধু। আর বারাসে গীত-রচয়িতারা সংসারের তাপদুঃখমাখা বিষয়বিষে জর্জরিত রসিক পুরুষ। অথচ ইহারা শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণবের উচ্চ লক্ষ্য রাসিরসিকশেখর শ্ৰীশ্ৰীকৃষ্ণের রসানুভাবক কবি বিশেষের ন্যায় নবরসে ভরপুর। বারাসে গীতে । প্রেম বিরহ আর নরনারীর চরিত্র চিত্ৰিত অাছে। ধৰ্ম্মভাব তাহার মাঝে ভস্মাচ্ছাদিত বহির ন্যায় প্রচ্ছন্ন। নলেগীতে পুর্ণ ধৰ্ম্মভাৰ নীরসভাবে জাগ্ৰত। যশোহর, খুলনা প্ৰভৃতি জেলায় নলেগীত অতি প্ৰসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা প্ৰভৃতি জেলায় ভাটেলগীত বা বারাসেগীিত সৰ্ব্বজনসমাদৃত হইয়াছিল। বঙ্গের অন্যান্য জেলার এই দুই সঙ্গীতকবিত্ব ততদূর পরিস্ফাট নহে। নদীমাতৃক জেলার দাড়ি মাঝিগণ কর্তৃকই ভাটেল গীত প্রচারিত হয়। এই সূত্রে চব্বিশ পরগণা ও বারাসত অঞ্চলেও কতক কতক এই সঙ্গীত প্রচলিত আছে। সুন্দরী-বনের ব্যবসায়ী পুরুষগণ কর্তৃক নিলে-গীত প্ৰচারিত, সুতরাং বঙ্গের পশ্চিমোত্তর ভাগে তত প্ৰচলিত নহে। নলে-গীত-রচয়িতারা প্ৰায়ই বর্ণজ্ঞানহীন । এই শ্রেণীস্থ ফকীরগণকে লোকে অধিকাংশস্থলে “বাওয়ালি ফকির” কহে। ইহারা প্ৰায়ই নিম্নশ্রেণীর অশিক্ষিত নিরক্ষর মুসলমান অথবা নিম্নবর্ণের হিন্দু। তবে স্থানে স্থানে দুই একটী মধ্যবিত্ত হিন্দুও আছে। তন্মধ্যে যশোর জেলার ফুলতলা ষ্টেসনের নিকটবৰ্ত্তী পাইকপাড়ার বীরেশ্বর দত্ত ওরফে ‘হরিঠাকুর” উল্লেখযোগ্য। সাধারণতঃ বাওয়ালিগণই নলে-গীতের রচয়িতা। “বাওয়ালি” অর্থে সুন্দরবনের বড় কাট কাটিবার অগ্ৰবৰ্ত্তী নাবিককে বুঝিতে হয়। এই সকল বাওয়ালিগণের মাথায় লম্বা লম্বা চুল, গলায় পুথি বা রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে দীর্ঘ একটি তৈলাক্ত নল, পায়ে খড়ম, পরিধানে মোটা তৈলাক্ত বস্ত্ৰ, অথবা গৈরিকবসন ; মুখে নলেগীত, অন্তরে নিঃস্বর্থ পারিত্রিকভােব—কাৰ্য্যে ঘোর নির্লিপ্ততা । আহারে বিহারে সংযত, সাধারণ কথায় মহাবক্তা, সততষ্ট উৰ্দ্ধনেত্র। কেহ তামাকুর ধূমপানে রত, কেহ গঞ্জিকায় আসক্ত । কিন্তু অনেক ফকীর আবার পূর্ণ নিষ্কাম, মাদকত্যাগী এবং বাকসংযত পুরুষ। বাওয়াল বা বনজাত ব্যবসায়ে এক সময় যশোহর, খুলনা, ২৪ পরগণার অনেক নিম্নশ্রেণীর হিন্দু মুসলমান প্ৰভূত অর্থ উপার্জন করিয়া গিয়াছে। * - নীলগীত-রচয়িত ফকীর কবিগণের গীতগুলি সাধকসঙ্গীত। তাহাতে ভাবের আবেগত, প্রার্থনার জলন্ত উচ্ছাস, অম্বরের ব্যাকুলতা, সৰ্ব্বধৰ্ম্মের একীকরণত এবং বিশ্বজনীন মহা প্রেমিকতা পরিস্ফুট। এই সকল কবিত্বে কঠোরতা আছে বটে, কিন্তু সৰ্বশ্ৰেষ্ঠ গুণ সমদৰ্শিতা। সকল শ্রেণীর সাধকই এই নলেগীতের মতে চলিতে পারেন। এই সকল গীত-রচয়িত নিরক্ষার ফকীর কবিগণ এক নিরাকার অদ্বিতীয় অখণ্ড ব্রহ্মের ছায়া अशेश जाकॉल निद्रांकालcडgन श्मि ধারাসিয়া-ধৰ্ম্মের গান, চণ্ডীর গান প্রভৃতি পালা-বাধা গায়কদলকে ‘বয়াতি’ বা ‘বারাসি' বলে, তাহান্ন সহিত ইহার সম্পর্ক কিছু আছে কি ?