পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਸਕ . ) নিরক্ষর কবি ও গ্ৰাম্য কবিতা । ୫୬୫ কবিগণ নবয়সের শ্ৰেষ্ঠ আদিরসকে লইয়া অনেক সময় কবিত্ব বিকাশ করিয়া সমশ্রেণীর মধ্যে শ্ৰেষ্ঠতা লাভ করিয়াছে। এই সকল কবি প্ৰকৃতির প্রকৃত কবি-ইহাদের কবিত্ব প্ৰকৃতিরু সঙ্গে গাথা । শিক্ষিত কবির ত কথাই নাই, অশিক্ষিত নিরক্ষর কবির হিন্দু-মুসলমানী ভাবে মোহনগীতিকবিত্ব অদ্যাপিও ভাষায় পরিচালিত হইতেছে। লোকে উহাকে সাধারণতঃ “মাণিকপৌষপার্বণ গীতি, হাবুীিতি পীরের গীত” বা “পৌষপার্বণ-গীতিকা” বলিয়া থাকে। নদীয়া ও মাণিকপীরের গীত। জেলায় এই গীতের প্রথম প্রচার হয়। বঙ্গপ্ৰসিদ্ধ প্ৰতিভাশালী কবিনাট্যকার রায় ৬/দীনবন্ধু মিত্ৰ মহাশয় উক্ত সঙ্গীত একটা সংগ্ৰহ করিয়া বঙ্গীয় পাঠককে উপহার দিয়াছিলেন। যখন পৌষসংক্রান্তি উপস্থিত হয়, তখন কৃষকগণ দলবদ্ধ ভাবে অথবা কেহ একাকী গৃহস্থের দ্বারে দ্বারে গিয়া এই গীত গাইতে থাকে। যাহারা দলবদ্ধ হইয়া যায়, তাহারা দীনবন্ধু বাবুর সংগৃহীত গীতটি প্ৰায় গান করে না। একক ব্যক্তি প্ৰায়ই সেই গীত গাইয়া থাকে। ইহারা এই গীত গাইয়া গৃহস্থের নিকট হইতে চাউল, পয়সা লইয়া “মাণিকপীর” নামক ফকীরের শিনী দিয়া থাকে। প্রায়ই কোন ময়দান অথবা মুক্ত প্ৰান্তরে পৌষংক্রান্তির দিন সকলে এই উপলক্ষে উৎসব করে। ইসলামধৰ্ম্মে পৌত্তলিক ভাব নাই বটে, কিন্তু কোরাণের পরবর্তী অনেকগুলি গ্রন্থে হিন্দুজাতির আদর্শভােব উদ্ধত হইয়া অনেক পীরু, পয়গম্বর, দরবেশ, ফকীর, সঁই প্রভৃতির পূজা প্ৰবৰ্ত্তিত হইয়াছে। ইহার মধ্যে মাণিকপীর আর গাজিপীরের প্রভাব বেশী ; কিন্তু এই সকল পৌত্তলিক ছায়া বঙ্গীয় মুসলমানগণের মধ্যে ব্যতীত, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এবং বোম্বে মাদ্রাজি মুসলমানগণের সমাজে পতিত হয় নাই। নিরক্ষর মুসলমান কবিরা এই সকল পীর ফকীরগণের কাহিনী পুরাতন বঙ্গীয় কবিগণের আদর্শে ফলশ্রুতি, উৎপত্তি, বিনয়, বন্দনা, মাহাত্ম্য প্রভৃতি অংশবিভাগে রচনা করিয়া থাকে। এজন্যই মাণিকপীরের গীতে অনেক ফলশ্রুভি আছে। আবার নিয়শ্রেণীর কৃষক গৃহস্থের প্রধান সম্পত্তি গোধনের মঙ্গলামঙ্গল এই গীতের মধ্যে অতি বিস্তৃতভাবে বর্ণিত আছে। উদাহরণস্বরূপ কবি নাট্যকার দীনবন্ধু বাবুর উদ্ধৃত গীতটির গুটিদুই চরণ উদ্ধৃত করিতেছি, - “কত কুন্দরূদ জান রে। আল্লা কত কুন্দরূদ জান, মাঝদরিয়ায় ফেলে জাল ডেঙ্গায় বসে টান । দুৰ্গার ছাওয়াল কাৰ্ত্তি করে ভাই মোরগ চাপি যায়, পুজা পালি বাজবিবির ছাওয়াল করে দেয়। কদু কুমড়া শশা পঝিঙ্গে উচ্ছে তাল ব্যাল, সকল ফসল ফেলে। আল্লা সরষের ভেতর ত্যালি । 事 অবুদ্ধি গোয়ালা মেয়ের কুবুদ্ধি ঘটিল, শিকের উপর হ্রদ রেখে পীরকে ফাঁকি দিল ॥” ইত্যাদি।