পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V 349 সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । [ ৩য় সংখ্যা। যাহা হউক “পিয়ার” যখন সংস্কৃত” শব্দ নহে অৰ্থৰ আরবী ফাসী ও ভারতীয় অন্যান্য ভাষার কোন ভাষা হইতে উৎপন্ন নহে, তখন ইহা কোথা হইতে আসিল ?” “ছন্দঃকুসুম” নামক ছন্দোবিষয়ক পুস্তকে “পয়ার” শব্দ (ছন্দ) “প্ৰাকৃত” বলিয়া নির্দেশিত হইয়াছে যথা :- “পাচালী নাম বিখ্যাত সাধারণ মনোরমা । পয়ার ত্ৰিপদী আদি প্ৰাকৃতে হয় চালনা ৷ দ্বিপদে শ্লোক সম্পূর্ণ তুল্য সংখ্যার অক্ষরে। পাঠে দুই পাদমাত্র শেষ অক্ষর সদা মিলে ৷” “ছন্দঃকুসুম” আধুনিক গ্ৰন্থ ; সুতরাং উহাকে প্রামাণিক বলিয়া গ্ৰহণ করা যায় না। কিন্তু ইহার বহুপূর্বে অর্থাৎ ১১৩৮ সনে লিখিত কায়স্থ কবি রামচন্দ্র খান কৃত “অশ্বমেধপর্ব” নামক প্রাচীন পুথির শেষে এইরূপ পাঠ দৃষ্ট হয় যথা :- “সপ্তদশ পৰ্ব্ব কথা সংস্কৃত বন্দ মুর্থ বুঝাইতে কৈল প্রাকৃতের ছন্দ।” * মালোক্য প্ৰকৃত যথা প্রচার “সামান্য লোকবোধ কৃত ছন্দ । অশ্বমেধকথা সমাপ্ত” মহামেদ সুধামকিছন্দ”।*।। ৬ষ্ঠ খণ্ড “পরিষৎপত্রিকা”র ৬৪ পৃঃ উক্ত পুথির সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাঠে দেখা গেল যে “মুখ বুঝাইতে”প্ৰভৃতির স্থলে “মুখ বুঝাবারে কৈল পরাকৃত ছন্দ্র” লেখা আছে। আর গন্তাংশের “মালোক্য প্ৰকৃত যথা” প্ৰভৃতির স্থানে “পত্রিকা”য় “শ্ৰীকান্তপুরাণমালোক্য প্রাকৃত কথা প্রচার সামান্যলোকবোধয়েৎ” লেখা আছে। ইহার দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে এই প্ৰকৃতছন্দ (?) অথবা পরাকৃতছন্দ সম্ভবতঃ প্ৰাকৃতছন্দ অর্থাৎ পয়ারকেই বুঝাইতেছে। কেননা পয়ার তখনকার বঙ্গদেশের সর্বজনবোধ্য ভাষা ; এই কারণে বোধ হয় কবি রামচন্দ্ৰ খান পয়ারছন্দকে “সামান্যলোকবোধকৃতছন্দ” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। যাহা হউক, আমাদের এরূপ অনুমানের একটা কারণও নির্দেশ করিতে পারা যায়। তখনকার পণ্ডিতনামধারী সংস্কৃতজ্ঞ ব্ৰাহ্মণসম্প্রদায় সংস্কৃত পড়িতেন, সংস্কৃতভাষায় কথাবাৰ্ত্ত কহিতেন এবং পুস্তকাদি লিখিতে তইলে সংস্কৃত ভাষাতেই লিখিতেন ; কিন্তু অশিক্ষিত সাধারণ জনগণের শিক্ষার জন্য র্তাহারা কোন উপায়ই অবলম্বন করিতেন না । তখনকার সাধারণ লোকদিগের ভাষা তৎকাল-প্রচলিত কথিত ভাষা ( সম্ভবতঃ গৌড়ীয় প্ৰাকৃত ) প্ৰচলিত ছিল ; সুতরাং সাধারণ লোকশিক্ষার জন্য কোন কিছু লিখিতে গেলে তখনকার কবিগণ গৌড়ীয় সাধুভাষায় তাহা ব্যক্ত করিতেন। উক্ত গৌড়ীয় সাধুভাষার তখনকার সংস্কৃত (বিশুদ্ধ ) নাম বোধ হয় “সামান্যলোকবােধকৃতছন্দ” ছিল, সাধারণে বাৈধ হয় “পয়ার” বলিত। তাহা হইলে পয়ারছন্দ যে প্ৰাকৃতমূলক এতদ্বারা তাহারও প্ৰমাণ হইতেছে ; কিন্তু “পয়ার” শব্দের মূল কোথায় ? এবং ইহা কোন সময়ে বাঙ্গালাভাষায় প্রবেশ লাভ করিয়াছে ? পূর্বে উক্ত

  • প্রদীপ-মাঘ ও ফাজ্জ্বন ১৩১০ সাল “রামচন্দ্ৰ থানকৃত অম্বমেধপর্ব” প্ৰবন্ধ ।