পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

of 9999 পয়ার ছন্দের উৎপত্তি । yÖS পক্ষ বলে ! এতৎসত্বেও কিন্তু “পদ আছে যাহার” এই অর্থে কেবল পয়ার ছন্দকেই বুঝাইতেছে। এরূপ বুঝাইবার কারণও যথেষ্ট আছে। আমাদের মনে হয় সংস্কৃতের কথিত ভাষা প্ৰাকৃত, যখন সংস্কৃতের কুক্ষিগত হইয়া সাহিত্যের ভাষায় পরিণত হইতেছিল, সে সময় হিন্দু ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের পরস্পর সংঘর্ষ চলিতেছে ; তজ্জন্য সাধারণজনগণকে হিন্দুধৰ্ম্ম বুঝাইবার জন্য মহাপ্ৰাজ্ঞ আৰ্য্য আচাৰ্য্যগণ আর একটি ভাষার প্রয়োজন অনুভব করিলেন এবং এই প্ৰয়োজন হইতেই তেঁাহারা প্ৰত্যেক প্রদেশের সাধারণ চলিত ভাষায় নানা পৌরাণিক উপাখ্যান, “ব্ৰতকথা” “ছাড়া” প্রভৃতি রচনা করিয়া দেশীয় অশিক্ষিত ও স্ত্রীলোকদিগকে উপহার দিতে লাগিলেন। এইরূপে প্ৰত্যেক প্রদেশের কথোপকথনের ভাষাসমূহ ক্ৰমে ক্রমে আবার স্বতন্ত্র ভাষায় পরিণত হইতে লাগিল। বঙ্গদেশের সে সময়ের নবঅঙ্কুরিত প্ৰাদেশিক ভাষার (প্রাকৃতের ) বোধ হয় তখন কোন বিশেষ নামকরণ হয় নাই। তখন সাধারণে আপনি আপন রুচি- Z অনুসারে ইহাকে ‘গৌড়ীয় সাধুভাষা’, সাধুভাষা “ভাষা প্ৰবন্ধ” “ভাষাকথা”প্ৰভৃতি নামে অভিহিত করিত। এই সময়ে কেন্দুবিন্থের অমর কবি শ্ৰীজয়দেব গোস্বামীর "গীতগোবিন্দ” কাব্যে “পয়ার” ছন্দের ডিম্ব হইতে পক্ষীশাবকের উৎপত্তির ন্যায়, অস্টধ্বনি শুনিতে পাওয়া গেল। ক্ৰমে সেই অশ্বফুটব্বনি বঙ্গসাহিত্যের আদ্যকালের আদি কবি বিস্কাপতি ও চণ্ডীদাসের পদাবলী এবং আর সেই মহাকবি কৃত্তিবাস প্রভৃতির কাব্যে প্ৰতিধ্বনিত হইয়া জগতের সম্মুখ বঙ্গসাহিত্যের তথা বঙ্গীয় আদিচ্ছন্দের জন্মকথা জ্ঞাপন করিল। কবিশ্রেষ্ঠ শ্ৰীজয়দেব গোস্বামীকে কেহ কেহ বঙ্গভাষার প্রথম কবি কেহবা সংস্কৃতের শেষ কবি ৰলিয়া গণ্য করেন। তিনি যে ভাষারই কবি হউন, আমরা কিন্তু তাহার অমর গীতিকাব্য “গীতগোবিন্দের চতুর্থ সৰ্গে” পয়ার ছন্দের জন্মগ্রহণের সংবাদ পাই । ছন্দটী এই :- সরস মসৃণমপি মলয়জ পঙ্কং । পশ্যতি বিষমিব বপুষি সশঙ্কং ॥ শ্বসিত-পবনমনুপম পরিণাহং । মদনদহনমিব বহতি সদাহং ৷ ইত্যাদি গীতগোবিন্দ-৪র্থ সৰ্গ । এইরূপ ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৯ম, এবং ১১শ সর্গেও পয়ার দৃষ্ট হয়। ইহাদের মধ্যে কোনটী ১৩, কোনটী বা ১৪ অথবা ১৫ অক্ষরমাত্রায় আবদ্ধ। সকলস্থলেই দুইচরণ ও শেষে মিলন এবং • প্রতিচরণের মধ্যেই যতি অর্থাৎ বাঙ্গালা পয়ারছন্দের সহিত সর্বাংশেই সমান। প্ৰভেদের মধ্যে উক্ত পদগুলি লঘুগুরু ভেদাত্মক ও সন্ধি-সমাস-সমন্বিত। ইহার কারণ গীতগােবিন্দের ভাষা “সংস্কৃতাভিসারিণী” fি জয়দেবের পরবর্তী কবিগণের কাব্য আলোচনা করিলে, আমরা দেখিতে পাই যে, তখনকার ভাষার উপর সংস্কৃতের প্রভাব কিঞ্চিত্মাত্ৰ থাকিলেও প্ৰকৃত প্ৰস্তাবে তাহ তখন প্ৰাকৃতরূপিণী ধাত্রীর আশ্রয় গ্ৰহণ করিয়াছে, এ কারণ র্তাহাদের কবিতার ভাষা “সংস্কৃতাপসারিণী” অর্থাৎ তখনকার ভাষার গতি প্ৰাকৃতের ( গৌড়ীয় প্রাকৃতের) দিকে যত অধিক সংস্কৃতের দিকে তত নহে। এইরূপে আবহমান কাল হইতে