পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN90 সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । [ ৩য় সংখ্যা ৰঙ্গভাষার উপর সংস্কৃতের জোয়ারতাটা খেলিতেছে। বস্তুতঃ দেবভাষা-সংস্কৃতমন্দাকিনী অমর কবি জয়দেবের মধুর কোমলকান্তগানে স্নেহবিগলিত হইয়া মহাদেবরূপী প্রাকৃতের জটামধ্যে প্রবেশ লাভ করে এবং কিঞ্চিদধিক প্রায় এক শতাব্দী ধরিয়া বহির্গমনের পথহারা হইয়া একপ্রকার অদৃশ্যাবস্থায় অবস্থিত করে, পরে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের ভক্তি কমণ্ডলুতে পতিত হয়। পরিশেষে সগরবংশজ ভগীরথের ন্যায় কীৰ্ত্তিমান কবি কৃত্তিবাস বঙ্গসাহিত্যের খাত কাটিয়া তাহাকে ( পয়ারছন্দকে ) বহু বিস্তৃতভাবে প্রবহমান করেন। পূর্বে প্রমাণিত হইয়াছে যে, প্ৰাকৃতভাষা হইতে একটি স্রোত বহির্গত হইয়া বঙ্গভাষাভিমুখে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহই বোধ হয় “মাগধী প্ৰাকৃত”। তারপর মগধের যশঃসৌরভ। নিম্প্রভ হইলে উহাই আবার “গৌড়ীয় প্রাকৃত” নামে পরিচিত হয়। কালক্রমে তাহাঁই আবার বর্তমান বঙ্গভাষায় পরিণত হইয়াছে। প্ৰাকৃতভাষার এই বঙ্গদেশাভিমুখী স্রোত দেশপ্ৰচলিত খাটি চলিত কথোপকথনের ভাষায় চলিত । কৃত্তিবাস প্ৰভৃতি প্ৰাচীন কবিগণ তৎকালীন দেশপ্রচলিত এই চলিত কথা অবলম্বনে “ভাষাকাব্য” রচনা করেন। এই ধারার প্রথমাবস্থায় বঙ্গভাষা মেয়েলীছড়া, মেয়েলীব্রত, ডাকের কথা, খনারবচন এবং প্রাচীন “প্রবাদমূলক ছড়া।” ( Proverbial sayings ) প্ৰভৃতির झूद्रा পরিপুষ্ট হইতেছিলঃ । ইহারা বঙ্গীয় নারীসমাজে আবহমান কাল হইতে আদর পাইয়া আসিতেছে । ইহাদের ভিতরও পয়ার ছন্দের একাধিপত্য ! কতদিন হইতে যে ইহারা বঙ্গদেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত ইত্যর ভদ্র প্রভৃতি সকলের নিকট সমভাবে আদর পাইতেছে, তাহার নির্ণয় করা দুষ্কর। বিশেষতঃ মেয়েলীছড়া, প্ৰাচীনপ্ৰবাদ, মেয়েলীব্রত প্ৰভৃতি যে কত দিনের তাহ কেহ নিৰ্ণয় করিতে পারেন। কিনা বলিতে পারি না। আমাদের বোধ হয়, যতদিন হইতে বঙ্গীয় নরনারী একত্ৰ সমাজ বদ্ধ হইয়া বসবাস করিতেছে, ততদিন হইতেই এ সকল বর্তমান! কেননা এই সকল শ্লোকাত্মিক পদসমূহ চলিত কথোপকথনের ভাষায় পরিপূর্ণ এবং সমাজশাসনীশক্তিমূলক ! বঙ্গসাহিত্যে এই সকল “বচন” ও “ছাড়া”র প্রচলনে পয়ারছন্দ গঠনের পক্ষে কিছু না কিছু সাহায্য হইয়াছিল। ইহাদের রচনার প্রকৃতি ও বর্তমানে অপ্রচলিত প্ৰাচীন শব্দসমূহের ব্যবহার দেখিয়া আমরা এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি। উপরিউক্ত “বচন” ও “ছাড়া’-গুলি অতি প্ৰাচীন কাল হইতে বঙ্গদেশে প্রচারিত হইলেও ইহার কোন কাব্যের ন্যায় পরস্পরগ্রথিত নহে। কিন্তু তথাপি ইহার যে বঙ্গীয় প্রাচীন কবিগণকে ছন্দ রচনায় বিশেষ সাহায্য করিয়াছিল, তাহাতে আর সন্দেহ নাই ॥ " উপসংহারে বক্তব্য এই যে, পয়ার শব্দ ও ছন্দের উৎপত্তির আলোচনায় বঙ্গীয় সাহিত্য{ তত্ত্ববিদগণের কিছুমাত্ৰ সন্তোষ উৎপাদন করিতে পারিয়া থাকি, তবে বারান্তরে ইহার “পরিণতি { ও পরিপুষ্টি” সম্বন্ধে আরও কিছু বলিবার ইচ্ছা রহিল-নচেৎ এই পৰ্যন্ত। i gb শ্ৰী রমেশচন্দ্ৰ বসু।

  • স্বীয় প্ৰবাদমালা সম্বন্ধে স্বতন্ত্র প্রবন্ধে বিশদভাৰে আলোচনা করিবার ইচ্ছা রহিল।