পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রঘুনাথ শিরোমণি কাণভট শিরোমণি পুণ্যভূমি নবদ্বীপ একটি প্রকৃত রত্নাকর। এই আকর হইতে যে কত শত রক্সের উদ্ভব হইয়াছে, তাহার ইয়ত্তা নাই। রঘুনাথ শিরোমণি এই সকল রত্বের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা উজ্জ্বল। মিথিলা ও নবদ্বীপ-নিবাসী কয়েকটি পণ্ডিতের মুখে শুর্তাহার জীবনের যে কয়েকটি অদ্ভুত ঘটনার কথা শুনিয়াছি, তাহা অবলম্বন করিয়াই এই প্ৰবন্ধটা লিখিত হইল। খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগেই রঘুনাথ নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিন চারি বৎসর বয়সে র্তাহার পিতৃ-বিয়োগ হয়। ভঁাহার পিতা অতি দরিদ্র ছিলেন। দরিদ্র পিতার মৃত্যু হইলে দরিদ্র জননীকে শিশু-সন্তানের লালন পালন জন্য যে কিরূপ দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়, তাহা সহজেই অনুমান করা যায়। রঘুনাথের মাতা ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিয়া বহুক্লেশে রঘুনাথের ভরণপোষণ করিতে লাগিলেন। তৎকালে বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌমই নবদ্বীপে শ্রেষ্ঠ নৈয়ায়িক পণ্ডিত ছিলেন। বহুসংখ্যক ছাত্র বহু-দূরবর্তী স্থান হইতে আসিয়া তাহার চতুষ্পাঠীতে ন্যায়শাস্ত্ৰ অধ্যয়ন করিতেন। রঘুনাথের মাত কয়েকটা ছাত্রের গৃহকাৰ্য্য সম্পন্ন করিয়া অতিকষ্টে আপনার ও পুত্রের জীবন রক্ষণ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। রঘুনাথের একটী চক্ষুঃ না থাকায় লোকে তঁহাকে “কাণা ভট্ট” বলিয়া ডাকিত। এই “কাণভট্ট”ই যে কত শত জ্ঞানান্ধ লোকের চক্ষুঃ ফুটাইয়া দিয়াছেন ও অদ্যাবধি দিতেছেন, তাহার সীমা নাই। মহাপুরুষের বাল্যকালেই মহাপুরুষত্ত্বের কিছু কিছু আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়। মহাপুরুষ রঘুনাথের সম্বন্ধেও মহাপুরুষত্ব-সুচক তিনটী জনশ্রুতি আছে :- প্রথমতঃ। রঘুনাথের মাতা একদিন তাহাকে টোল হইতে আগুন আনিতে বলেন। রঘুনাথ আগুনের জন্য একটী ছাত্রকে পুনঃ পুনঃ বিরক্ত করায় ছাত্ৰটী এক হাত আগুন লইয়া ভঁাহায় সম্মুখে ধরিল। বালক রঘুনাথ উপায়ান্তর না দেখিয়া এক অজলি বালুকা লইয়া অগ্নি লইবার জন্য প্ৰস্তুত হইলেন। বাসুদেব সার্বভৌম সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বােলকের প্রত্যুৎপন্ন-মতিত্ব দেখিয়া অবাক হইয়া গেলেন। সেই দিনই তিনি রঘুনাথের মাতাকে ডাকাইয়া আনিয়া কহিলেন, “তোমার ছেলেট বড়ই বুদ্ধিমান। . কালক্রমে ছেলেট একটী রত্ন হইবে। অদ্য হইতে আমি ইহার পড়াশুনার ভার লইলাম।” বাসুদেবেয়া কৃপার কথা শুনিয়া রঘুনাথের মাতা আহলাদ-সহকারে তঁহার হস্তে রঘুনাথের বিদ্যাশিক্ষার ভায়ার্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত রহিলেন। O দ্বিতীয়তঃ। রঘুনাথের পাঁচ বৎসর বয়সের সময় বাসুদেব তাঁহার হাতে খড়ি দিলেন। রঘুনাখ “ক খ’ পড়িতে লাগিলেন। ‘ক খ’ পড়িতে পড়িতে স্বতঃই তঁহায় মনে হইল যে, অগ্ৰে “ক” না।