পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (একাদশ ভাগ).pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা। : Ya teet পড়িয়া ‘খ’ পড়িলেই বা কি দোষ হয় ? বালক রঘুনাথ স্বয়ং এই সন্দেহের কিছুমাত্র মীমাংসা করিতে না পারিয়া বাসুদেবকে ইহার মীমাংসা করিতে বলেন। বাসুদেব শিষ্যের দুরন্ত জটিল প্রশ্ন শুনিয়া মহাবিপদে পড়লেন। কোনও ছাত্রই তাঁহাকে পূর্বে এরূপ অদ্ভুত প্রশ্ন করে নাই। সংস্কৃত বর্ণমালা কণ্ঠ, তালু, মূৰ্দ্ধা, দন্ত ও ওষ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত এবং বৈজ্ঞানিক প্ৰণালীতে আবদ্ধ। ৰাসুদেব রঘুনাথকে কোনরূপে ইহা বুঝাইয়া দিয়া এ ঘোর বিপদ হইতে স্বয়ং নিস্কৃতি লাভ করিয়াছিলেন। তৃতীয়তঃ । বুযুনাথ বাসুদেবকে ছাড়িবার পাত্র ছিলেন না। ব্যঞ্জন-বর্ণে দুইটী “জ”, দুইটী “ন”, দুইটী “ব” ও তিনটী “স” থাকিবার কারণ কি, তাহা তিনি একদিন তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। বাসুদেব পুনৰ্বার বিপদে পড়িলেন। তিনি রঘুনাথের প্রশ্ন-কৌশল দেখিয়া মনে করিতে লাগিলেন, এ সামান্য বালক নহে। এরূপ প্রশ্নের উত্তর বালককে বুঝাইয়া দেওয়া বড় সহজ কথা নয়। বাসুদেব কোনরূপে ইহা রঘুনাথকে বুঝাইয়া দিয়া তাঁহাকে তুষ্ট করিয়াছিলেন। একমাত্র বর্ণমালা শিখাইতে গিয়াই বাসুদেব রঘুনাথকে ব্যাকরণের অনেক বিষয় শিক্ষা দিয়াছিলেন। রঘুনাথ অতি অল্প বয়সেই ব্যাকরণ, অভিধান, কাব্য ও স্মৃতি শাস্ত্রের অধ্যয়ন শেষ করিয়া বাসুদেবের নিকট ন্যায়শাস্ত্ৰ অধ্যয়ন করিতে আরম্ভ করেন । বাসুদেব যেরূপ যত্ন-সহকারে রঘুনাথের অধ্যাপনা করিতে লাগিলেন, রঘুনাথও ততোধিক যত্ন-সহকারে স্বয়ং অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। বাসুদেব দিবাভাগে রঘুনাথকে যে সকল পাঠ দিতেন, রঘুনাথ রাত্রিকালে তাহা অন্ন অন্ন করিয়া বুঝিয়া লইতেন, এবং বাসুদেবের ব্যাখ্যায় কোনরূপ ক্ৰটি থাকিলে রঘুনাথ প্ৰাতঃকালেই তাহা বাসুদেবকে জানাইতেন। ক্ৰমে ক্রমে রঘুনাথ স্বীয় অখণ্ডনীয় যুক্তিপ্রভাবে বাসুদেবের মত খণ্ডন করিতে লাগিলেন এবং বাসুদেবের বিদ্যাবুদ্ধিরও প্রভাব কত দূর, তাহাও তিনি সম্যগােরাপে অনুভব করিলেন। বাসুদেব “সার্বভৌম-নিরুক্তি” নামক একখানি টীকা-গ্ৰন্থ রচনা করিয়াছিলেন। কুশা গ্ৰীয়-বুদ্ধি রঘুনাথ এই গ্রন্থের নানা ঘোষ বাহির করিতে লাগিলেন। নৈয়ায়িক-রাজ গঙ্গেশ উপাধ্যায়ও তঁহার হস্ত হইতে নিস্কৃতি লাভ করিতে পারেন নাই। রঘুনাথ তাহার কৃত “চিন্তামণি” গ্রন্থের নানা দোষ বাহির করিয়া ও তাম্বু একত্র লিপিবদ্ধ করিয়া স্বীয় মত প্ৰকাশ করিতে লাগিলেন। রঘুনাথের এই সমস্ত অলৌকিক কাণ্ড দেখিয়া নবদ্বীপে মহা হুলস্থূল পড়িয়া গেল! এই সময়ে নবদ্বীপে মহাত্মা শ্ৰীচৈতন্য-দেবের প্রাদুর্ভাব। চৈতন্যদেব রঘুনাথের সমপাঠী, ছিলেন বলিয়া উভয়েরই মধ্যে পরম সৌহার্দ ছিল। রঘুনাথের যখনই যে কিছু সন্দেহ হইত, তখনই তিনি তাঁহা চৈতন্যদেবকে জ্ঞাপন করিলেই তাহার যুক্তি-সঙ্গত মীমাংসা পাইতেন। এক দিন রঘুনাথ কোনও জটিল প্রশ্নের সমাধান করিবার জন্য নবদ্বীপের নিকটবৰ্ত্তী কোনও প্রান্তরে এক যজ্ঞ-ডয়ূর-বৃক্ষতলে একাগ্ৰচিত্তে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। চিন্তাশীলতাই রঘুনাথের সবিশেষ গুণ ছিল । তিনি দিবানিশি সেই স্থানে থাকিয়া এরূপ চিন্তামগ্ন হইয়াছিলেন যে, পক্ষিগণ৷ আঁহার গাত্ৰে মলত্যাগ করিলেও তাঁহার চিন্তাভঙ্গ হয় নাই। পরদিন প্ৰাতঃকালে চৈতন্যদেব