পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (চতুর্থ ভাগ).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেহ-কড়চ । ( ৮ নরোত্তম ঠাকুর বিরচিত ) ইংরাজাধিকারের পূর্বে অসংখ্য বাঙ্গালা পদ্য গ্ৰন্থ রচিত হইলেও, বাঙ্গালা গদ্য গ্ৰন্থ তেমন অধিক রচিত হয় নাই। পদ্য রচনায় যেরূপ আগ্রহ ছিল, গদ্য রচনায় সেরূপ উৎসাহ বা সেরূপ যত্ন পরিলক্ষিত হয় না। অনেকের বিশ্বাস, ইংরাজাধিকারের পূর্বে ৰাঙ্গালায় গদ্য সাহিত্যের প্রকাশ হয় নাই। রাজা রামমোহন রায়ের সময় হইতেই গদ্য সাহিত্যের বিকাশ ! বাঙ্গালা ভাষার প্রথমাবস্থায় পদ্যের ন্যায়। গদ্যের তেমন সমধিক আলোচনা না থাকিলেও প্ৰাচীন বঙ্গভাষা গদ্যসাহিত্যবর্জিত নহেন, তাহার। আমরা অনেক প্ৰমাণ পাইয়াছি । সেই গদ্যসাহিত্যের বিস্তৃত আলোচনা করা এ প্ৰবন্ধের উদ্দেশ্য নহে। এ সম্বন্ধে বিস্তৃত সমালোচনাযুক্ত একটি বৃহৎ প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করিবার ইচ্ছা আছে। পূর্ব প্ৰবন্ধে যে মহাত্মার জীবনী লিপিবদ্ধ হইয়াছে, আমাদের আলোচ্য দেহকড়চ’ নামক গ্ৰন্থখানি তঁাহার রচিত। ইহা বঙ্গভাষার এক খানি প্ৰাচীন গদ্য গ্ৰন্থ । প্ৰায় সাড়ে তিন শত বর্ষ পূর্বে বাঙ্গালা গদ্য সাহিত্যের কিরূপ অবস্থা ছিল, এই ক্ষুদ্র পুস্তিকা হইতে তাহার কতক কতক নিদর্শন পাওয়া যায়। দেহ-কড়চের দুই খানি পুথি * আমাদের হস্তগত হইয়াছে। ইহার মধ্যে এক খানি নরোত্তম ঠাকুরের জন্মস্থান খেতরী গ্রামের নিকটবৰ্ত্তী এক বাবাজীর কুটীর হইতে এবং অপর খানি মুর্শিদাবাদের অন্তৰ্গত আজিমগঞ্জের নিকটবৰ্ত্তী এক মোহান্তের মঠ হইতে পাওয়া গিয়াছে। প্ৰথম পুথিখানি অতি জীর্ণ শীর্ণ, দেখিলেই দুই শতাধিক বর্ষের প্রাচীন বলিয়া বোধ হয়। পুথির শেষে ১৬০৩ শক লেখা আছে। ঐ শকে গ্ৰন্থখানি নকল হয়। এই পুথি খানিকেই আমরা আদর্শস্বরূপ গ্ৰহণ করিলাম। কঁটোয়ার পুথিখানি বড় পুরাতন বলিয়া বোধ হইল না। গ্ৰন্থ-সমাপ্তির পর লেখকের নাম বা সন তারিখ দেওয়া নাই। তবে এই পুথির কাগজ ও লেখা দেখিয়া কম বেশ ৭০।৮০ বর্ষের প্রাচীন বলিয়া ধরা যায় । দুই খানি পুথিই বর্ণাশুদ্ধিতে পরিপূর্ণ। এমন পঙক্তি নাই, যাহাতে ৫। ৭ টী বানান ভুল না আছে। তাই বলিয়া আমরা মূলে ঐ সকল বৰ্ণাশুদ্ধির সংশোধন করিতে চেষ্টা করিব না। আদর্শ পুথিতে যেমন আছে, ঠিক তাহাঁই দেখাইব, টকাতে সংশোধন, পাঠান্তর ও প্রয়োজন হইলে অর্থাদি লিখিয়া দিব ।

  • দেহকড়চের পুথি দুইখানি বিশ্বকোষ কাৰ্য্যালয়ে রক্ষিত আছে। আজ প্ৰায় দুই বর্ষ অতীত হইল, শ্ৰীযুক্ত বিহারীলাল সরকার ঐ পুথি দেখিয়া বঙ্গবাসীতে ইহার উল্লেখ করেন, তৎপরে পরিষৎ-পত্রিকায়ও শ্ৰীযুক্ত বিহারীলাল সরকারের বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনী মধ্যে এবং অবশেষে শ্ৰীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেনের “বঙ্গভাষী। ও সাহিত্য” নামক নবপ্রকাশিত অতি উপাদেয় গ্রন্থে এই মুদ্র গ্রন্থের সামান্য পরিচয় মাত্র

প্রদত্ত হইয়াছে।