পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (চতুর্থ ভাগ).pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন। ১৩০৪ । মহারাণী বিক্টোরিয়ার রাজত্বে বাঙ্গালা সাহিত্য । G থাকে। মানুষ সভ্যতার দিকে যতই অগ্রসর হইতে থাকে, ততই তাহার চিন্তাশীলতার সঙ্গে সঙ্গে দার্শনিক ভাবের বৃদ্ধি হয়। তখন সে সরল হৃদয় ভাবুক না হইয়া, প্রগাঢ় চিন্তাশীল দার্শনিক হইয়া উঠে । 食 “কিন্তু আদিম অবস্থার সকলেই প্ৰকৃত কবিত্বের অধিকারী হইতে পারে না । প্ৰতিভা সকলকে কাব্যজগতের আধিপত্য প্ৰদান করে না । * * * পূৰ্ব্বতন অবস্থায় মানুষের ভাষা কবি, স্বত্বময় হইলে, ও প্ৰতিভাশালী ব্যক্তিরাই প্ৰকৃত কবি বলিয়া সন্মানিত হয়েনি। কবি লোকের সমক্ষে মায়া বিস্তার করেন। এক জন প্রসিদ্ধ লেখক ছায়াবাজার সহিত উহার তুলনা করিয়াছেন। অন্ধকারময় গৃহে ছায়াবাজী যেমন দর্শকের সমক্ষে নানা দৃশ্য বিস্তার করে, অজ্ঞানান্ধকারের মধ্যে কবিতাও সেইরূপ মায়া দেখাই ? লোকের হৃদয় উদভ্ৰান্ত করিয়া তুলে। আলোকের সঞ্চারে ছায়াবাজার কৌশল যেমন ক্ৰমে অন্তহত হয়, সভ্যতা বিস্তারের সঙ্গে জ্ঞানালোকের প্রসারণে কাব্যজগতের সেই চিত্তবিমোহিনী মায়াও ক্রমে অপগত হইতে থাকে। যাহা হউক, সভ্যতার অপূর্ণ অবস্থায় উৎকৃষ্ট কাব্যের উৎপত্তি হইলেও যে, সভ্যতার পূর্ণ অবস্থায় কবিতার উৎকর্ষ সাধিত হয় না, এমন নহে। প্ৰতিভা সহায় হইলে মানব উন্নত অবস্থাতেও কবিত্বশক্তির সবিশেষ পরিচয় দিতে পারে । সভ্যযুগে এমন অনেক কাব্যের সৃষ্টি হইয়াছে যে, তৎসমুদয় অন্যাপি সাহিত্যভাণ্ডারে অমূল্য রত্বের মধ্যে পরিগণিত রহিয়াছে, এবং যাহাঁদের প্রতি ভাগুণে সেই সকল কাব্য পাঠকের হৃদয় অনাস্বাদিতপূৰ্ব্ব সন্তোেষরসে অভিষিক্ত করিতেছে, তাহারা অদ্যপি সমগ্ৰ কবিসমাজে প্ৰধান স্থান অধিকার করিয়া রহিয়াছেন। মিণ্টনের ন্যায় কোন কবি সহৃদয়সমাজে প্রাধান্য স্থাপন করিতে পারেন নাই। কিন্তু সভ্যতার আদিম অবস্থায় মিণ্টনের আবির্ভাব হয় নাই। মিল্টন সভ্যযুগে প্ৰাদুভূত হইয়াছিলেন। বিদ্যালয়ে তাহার সুশিক্ষা লাভ হইয়াছিল। লাতিনে তাহার অসামান্য বুৎপত্তি ও স্মিয়াছিল। তিনি ইউরোপের নানা দেশে পরিভ্রমণপূর্বক ভুয়োদৰ্শিতা লাভ করিয়াছিলেন। তিনি বিভিন্ন জনপদের পণ্ডিতদিগের সহিত আলাপ করিয়া, সংগৃহীত জ্ঞানের সম্প্রসারণে সমর্থ হইয়াছিলেন। ইউরোপের প্রচলিত ভাষায় তাহার যথোচিত অধিকার ছিল। তিনি দার্শনিকভাবে সমস্ত বিষয় পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেন ; দার্শনিক ভাবে তৎসমুদয়ের আলোচনা করিতেন, দার্শনিক তত্ত্বের সহিত দুরবগাহ রাজনীতির পরিচয় দিয়া লোকের হৃদয় চমকিত করিয়া তুলিতেন। এইরূপ সভ্যতার অবস্থায়, সভ্যযুগের অনুমোদিত এইরূপ সুশিক্ষায়, রাজনীতি ও দার্শনিক ভাবের এইরূপ জটিলতায়, মিণ্টনের প্রতিভা সঙ্কুচিত হয় নাই। মিণ্টন ষে মহাকাব্যের সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা সমগ্ৰ কাব্যজগতে অপ্ৰতিদ্বন্দ্বী হইয়া রহিয়াছে।” সভ্যতার উৎকর্ষে বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিক জ্ঞানের প্রাধান্যে বাঙ্গাল কাব্য যে, উন্নতাভাব বিসর্জন দিয়াছে, তাহা নহে। প্ৰতিভাশালী বাঙ্গালী কবি বৰ্ত্তমান যুগে পাশ্চাত্য