পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (তৃতীয় ভাগ).pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

rr x \De O ) ভৌগোলিক পরিভাষা। \9 J প্রস্ফুটিত হইয়াছে। বঙ্গভাষার সুধী সেবকগণ বঙ্গভূষাকে সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দরী করিতে যেরূপ যত্নবান হইয়াছেন, তাহাতে বঙ্গভাষা যে কালে মাতা অপেক্ষা বিভবশালিনী হইবে এরূপ আশার মূলে নিরুৎসাখের কোন কারণ দেখিতে পাই না। সংস্কৃত ভাষার যে অভাব তাহা আর পুর্ণ হইবে না-কিন্তু বঙ্গভাষার অভাব দিন দিন পূর্ণ হইতেছে। অণুবীক্ষণ, দূরবীক্ষণ প্রভৃতি শব্দ অমর, ভরত, জটাধর প্রভৃতি কোষকারগণের মস্তিষ্কে কখনও প্রবেশ করে নাই । কিন্তু বঙ্গ ভাষার শব্দকোষে এরূপ শব্দ নিতান্ত অল্প হইবে না। জ্ঞানের বৃদ্ধির স:িহত ভাষার ও উন্নতি হয়। জ্ঞান যখন নিকট সম্বন্ধীয়, নিত্য ব্যবহাৰ্য্য, একান্ত প্ৰয়োজনীয়, কতিপয় অবশ্য জ্ঞাতব্য বিষয়ে আবদ্ধ ছিল, তখন মানুয্যের ভাষাও অতিশয় ক্ষীণ ছিল। কিন্তু জ্ঞানের পরিধি যতই বিস্তুত হইতে লাগিল মনুষ্যের ভাষাও তােতই পরিপুষ্ট হইতে লাগিল ; মনুষ্য যখন সন্নিকৰ্য অতিক্রম করিয়া দূরত্বে দৃষ্টি প্রসারিত করিতে শিখিল ; যখন সুখস্বাচ্ছন্দ্য অধিকারের জন্য নূতন নূতন উপায়োদঘাটনে যত্নবান হইল ;-যখন বহির্জগতে প্ৰবেশ করিল এবং সেই অদৃষ্টপুৰ্ব্ব অনাধিস্কৃত রাজ্যের নিয়মাদি আবিষ্কৃত ও অধিগত করিতে সযত্ন হইল,-যখন প্ৰকৃতির বাহ্য গৌরবে স্তম্ভিত ও বিনমিত না হইয়া, তাহার অন্তর্নিহিত শক্তির রহস্যোস্তুেদে সযত্ন হইল, তখন দিন দিন নুতন নূতন পদার্থ ও তাহার গুণ ধৰ্ম্ম মনুষ্য জ্ঞানের বিষয়ীভূত হইতে লাগিল এবং মানুষ্যের ভাষা বিবিধ জ্ঞানে বিস্তারিত হইয়া বিশালায়তন হইল। ক্ষুদ্রতরু ক্রমশঃ চতুর্দিকে বহুদূর পর্য্যন্ত শাখা প্ৰশাঁখা বিস্তার করিয়া তাপ, আলোক ও নিৰ্ম্মল বায়ু আকর্ষণ করিতে লাগিল এবং ক্রমশঃ সতেজ ও পরিপুষ্ট হইতে লাগিল । কাব্য, অলঙ্কার, দর্শন, ন্যায়, আম্বিক্ষিকী, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, ভূগোল, গণিত, ইতিহাস প্রভৃতি সকল বিষয়ের জ্ঞান ভাষার সহিত ঘনিষ্ট সুত্রে আবদ্ধ-সকলেই ভাষার শাখা প্ৰশাখা প্ররোহ। ভাষার সম্পূৰ্বদেশবৰ্ত্তিনী উন্নতি করিতে হইব্লুে ভাষাকে সৰ্ব্বতোমুখ জ্ঞানের উপযোগিনী করিতে হইবে। ভূগোল, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে বঙ্গভাষা বড় দরিদ্র। এ দারিদ্র্য দূর করিতে না পারিলে বঙ্গভাযার সাৰ্ব্বতোমুখী উন্নতি হইবে না। সৌভাগ্য বশে সাহিত্য-পরিষদ এ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য স্থির সঙ্কল্প হইয়াছেন। ভূগোল সম্বন্ধেই পরিষদ প্রথম হস্তক্ষেপ করিয়াছেন। ভৌগোলিক পরিভাষা প্ৰণীত ও প্রচারিত হইয়াছে। ভাষান্তর। কাৰ্য্য বড় কঠিন, কিন্তু যে সকল বিশাল মস্তিষ্ক এই দুরূহ ব্যাপারে নিয়োজিত হইয়াছিল, তাহাতে ভৌগোলিকা পরিভাষাটি আশ্নাতীত সুচারুভাবে সম্পাদিত হইয়াছে তথাপি সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। এরূপ গুরুব্যাপার যে প্রথম উদ্যমেই অনিন্দ্যাসুন্দরীরূপে সম্পাদিত হইবে, এরূপ আশা করাও সুচিস্তাসম্মত নহে। বোধ করি, অনাবধানতা নিবন্ধন কয়েক স্থানে ক্রট রহিয়া গিয়াছে। সেই ক্ৰটি গুলির প্রতি সুযোগ্য পারিভাষিক সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত নগেন্দ্ৰনাথ বসু মহাশয়ের অভিপ্ৰায়ানুসারে এই প্ৰবন্ধ প্ৰকাশে, প্ৰণোদিত হইলাম ।