২৩৬ । সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা কি উদ্দেশ্যে এই দুর্গ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহা আলোচ্যের বিষয়। ইদ্রাকপুরের ভৌগোলিক সংস্থান পৰ্য্যালোচনা করিলে ইহা সহজেই উপলব্ধি হয় যে, বাঙ্গালার তদানীন্তন রাজধানী ঢাকা নগরীকে সুরক্ষিত করিবার জন্য ঐ রূপ স্থানে দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করা আবশ্যকীয় হইয়া পড়িয়াছিল । ইদ্রাকপুর মেঘনা, ধলেশ্বরী ও লক্ষ্যা এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। পূৰ্ব্ব-বাঙ্গালী নদীবহুল স্থান ; শত্ৰুগণের ঐ প্রদেশ আক্রমণ করিতে হইলে জলযুদ্ধ ভিন্ন অন্য উপায় ছিল না এবং সাধারণতঃ ঐ . প্রদেশে নৌযুদ্ধই সংঘটিত হইত। ইদ্রাকপুর যেরূপ স্থানে স্থাপিত, তাহাক্তে ইহাকে ঢাকার প্রবেশদ্বার বলিলে অত্যুক্তি হয় না। ঢাকানগরী আক্রমণ করিতে হইলে ঐ স্থান অতিক্ৰম করিতে হইত এবং ঐ পথ ভিন্ন অন্য জলপথ ছিল না । সুতরাং ঐ স্থান সুরক্ষিত হইলে ঢাকা একরূপ শত্রু-আক্রমণ হইতে নিরাপদ হইবে সেই উদ্দেশ্যে এই দুর্গ ইছামতী নদীর দক্ষিণপারে স্থাপিত হয়। নদীর অপরপারে হাজিগঞ্জে এইরূপ অন্য একটি দুৰ্গ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল ; তাহারও ভগ্নাবশেষ অদ্যাপি বৰ্ত্তমান আছে। এই উভয় দুৰ্গ আফগান (ਸ), আসামী, ফিরিঙ্গি ও মগ প্রভৃতি শক্রিগণের আক্রমণের প্রতিরোধ করিত। ঢাকা নগরী সংরক্ষিত করা ব্যতীত এই দুৰ্গস্থাপনের অন্য এক মহত্তর উদ্দেশ্য ছিল। একদিকে পূর্ববঙ্গবাসী যেমন আসামী ও আফগানের আক্রমণে বিপৰ্য্যস্ত, তেমনি মগ ও পর্তুগীজ জলদসু্যর অত্যাচারেও উৎপীড়িত হইয়াছিল। নদীবহুল পূর্ব-বাঙ্গালায় এই ফিরিঙ্গি ও মগের প্রকোপ এত বাড়িয়া উঠে যে, ইহাদিগকে দমন করিবার নিমিত্ত মুসলমান শাসনকৰ্ত্তাদিগকে নানারূপ উপায় উদ্ভাবন করিতে হয়, ইদ্রাকপুরে ও হাজিগঞ্জে দুৰ্গ-স্থাপন ইহার একতম উপায়। পূর্ববঙ্গবাসী দিগকে মগ ও ফিরিঙ্গির অত্যাচার হইতে উদ্ধার করাই ইহার প্ৰধান উদ্দেশ্য ছিল। ঐতিহাসিকগণও-( রিয়াজ উস-সালাতিন রচয়িতা মিরজা মহম্মদ 夺忆项双 প্রভৃতি ) লক্ষ্যা ও ইছামতীর সঙ্গমস্থলে মীরজুমলা কর্তৃক নিৰ্ম্মিত নৌসুর্গের (Nawal fort) নির্দেশ করিয়াছেন ।* মগ ও ফিরিঙ্গি দসু্যাগণের অত্যাচারে সমগ্ৰ বঙ্গভূমি সন্ত্রাসিত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহদের ঘৃণিত ও পশুতুল্য অত্যাচারের কথা শ্রবণ করিলে আজও প্ৰাণ শিহরিয়া উঠে। তৎকালে একমাত্র আরাকান প্ৰদেশই গোয়া, কোচিন, মালাক্কা প্রভৃতি স্থান হইতে নির্বাসিত চরিত্রহীন ফিরিঙ্গিগণের আশ্রয়স্থল হইয়াছিল । আরাকান-রাজ মোগলের আক্রমণ হইতে সীমান্ত প্ৰদেশ রক্ষার নিমিত্ত ইহাদিগকে চাটগাঁ ও বন্দরে স্থাপন করেন এবং সেখানে তাহাদিগকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্ৰদান করিয়াছিলেন। তখন চাটগাঁও “পোর্ট গ্ৰাণ্ডো” (Porto Grando) নামে অভিহিত হইত এবং উহা মগরাজের অধীনে ছিল। ফিরিঙ্গিগণ ঐ স্থানে বাস করিত এবং নানারূপ দাসু্যবৃত্তি দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করিত। এই উদ্দেশ্যে তাহারা এত ঘৃণিত ও নিষ্ঠুর, কাৰ্য্য করিত যে তাহা শ্রবণ করিলে তাহাদিগকে সভ্য-জাতির See Taylor's Topography of Dacca,-p. 76 and Clay's. Principal Heads of the listory and Statistics of the Dacca Division, , 35. 'ቘ
পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (ষোড়শ ভাগ).pdf/২৫০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।