পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিরাজের ধর্ম্মবিশ্বাস।
১০১

মহারাষ্ট্ৰকবলে উৎসর্গীকৃত হইয়াছে,— যাহা রাজা রামনারায়ণের শাসনাধীনে রহিয়াছে, তাহাতেও রামনারায়ণের সুশাসন ভাল করিয়া সংস্থাপিত হইতে পারে নাই। সিরাজদ্দৌলা বুঝিলেন যে, কেবলমাত্র মুর্শিদাবাদ প্রদেশেই যাহা কিছু সাক্ষাৎসম্বন্ধে নবাবের শাসনক্ষমতা বর্ত্তমান। কিন্তু সে প্রদেশের প্রতিভাশালিনী শাসনকর্ত্তী রাণী ভবানী, ধনকুবের জগৎশেঠ, বা অধ্যবসায়শীল ইংরাজবণিকের নিকট বিপদের দিনে সহায়তা লাভ করিবার সম্ভাবনা নাই! রাজবল্লভের চেষ্টায় রাজধানীর ক্ষমতাশালী পাত্রমিত্রগণ সকলেই অল্পাধিক পরিমাণে. সিরাজের শত্রুপক্ষের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী হইয়া উঠিয়াছেন! সিরাজদ্দৌলার আর কি রহিল। একমাত্র স্নেহপরায়ণ মাতামহ, তিনিও যে অন্তিম-শয্যায় শয়ন করিয়াছেন, তাহা ত্যাগ করিয়া পুনরায় বীরদর্পে গাত্রোত্থান করিবার সম্ভাবনা নাই! তথাপি সিরাজদ্দৌলা ক্রমে ক্রমে তাঁহারই কণ্ঠলগ্ন হইয়া পড়িলেন।

 সময় থাকিতে নিয়ত আলিবর্দ্দীর ন্যায় ধর্ম্মপরায়ণ প্রজাহিতৈষী প্রবীণ নরপতির সাধু দৃষ্টান্তের অনুকরণ করিলে, সিরাজ-চরিত্র যে অন্যবিধ উপাদানে গঠিত হইত, এবং বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার বর্ত্তমান ইতিহাস যে অন্যবিধ আকার ধারণ করিত, তাহা সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। কিন্তু মুসলমানের পাপের ভরা পূর্ণ হইয়া আসিয়াছিল, বুঝি সেই জন্যই সময় থাকিতে সিরাজদ্দৌলার মোহনিদ্রা ভাঙ্গিল না।

 মুসলমান ধর্ম্মে সিরাজদ্দৌলা কোনদিনই আস্থাশূন্য হন নাই; বরং ধর্ম্মানুরাগে অনুপ্রাণিত হইয়া, তিনি বহুযত্নে বহুব্যয়ে আরব দেশের মরুমরীচিকাবেষ্টিত মদিনা নগরের পবিত্র মৃত্তিকা ভারতবর্ষে আহা করিয়া তাহার উপর যে পুণ্য মসজেদ গঠন করিয়াছিলেন, তা বহু-