পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজের কাকুতি মিনতি।
১৭৩

স্থানেই আশ্রয়লাভ করিবার অবসর পাইল না। তখন সকলে মিলিয়া দুর্গদ্বারে সমবেত হইয়া দুর্গমধ্যে আশ্রয়লাভ করিবার জন্য করুণক্রন্দনে পাষাণহৃদয় বিগলিত করিতে লাগিল। অবশেষে নিতান্ত নিরুপায় হইয়া তাহাদিগকেও দুর্গমধ্যে আশ্রয়দান করিতে হইল। ইংরাজদুর্গ স্বেচ্ছাচারের লীলাভূমি হইয়া উঠিল;—কেবল কোলাহল, কেবল আর্ত্তনাদ, কেবল স্বার্থচিন্তা;—সকলেই বুঝিল যে, নগর রক্ষা করা ক্রমেই অসম্ভব হইয়া উঠিতেছে।

 নবাবের বৃহদায়তন দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র যখন ভীমগর্জ্জনে তাহার আগমনবার্ত্তা ঘোষণা করিতে লাগিল, ইংরাজেরা তখন নিতান্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া নবাবের মনস্তুষ্টিসাধনের জন্য কৌশলজাল বিস্তার করিতে ত্রুটি করিলেন না। অর্থ-প্রলোভনে সিরাজদ্দৌলাকে রাজধানীতে প্রত্যাগত করাইবার জন্য উৎকোচ উপঢৌকন লইয়া নানারূপ কাকুতি মিনতি জানাইতেও কৃপণতা করিলেন না। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা কিছুতেই সঙ্কল্পচ্যুত হইলেন না।[১] যখন সকল চেষ্টা নিষ্ফল হইয়া গেল, তখন বিপদে পড়িয়া ইংরাজ-বীরপুরুষেরা নগররক্ষার জন্য আপন আপন সঙ্কেতভূমিতে সমবেত হইতে লাগিলেন; বাহিরে নবাবশিবিরে ঘন ঘন কামানগর্জ্জন, ভিতরে ইংরাজমণ্ডলীতে ততোধিক তুমুল কোলাহল;—এইরূপে উৎ

  1. The usual method of calming the angry feelings of eastern princes was resorted to. A sum of money was tendered in purchase of the Subahder's absence, but refused.—Thornton's History of the British Empire, vol. 1 189. বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বলেন, “সম্ভবতঃ” রনটনের এই উক্তি ভ্রমাত্মক। কেন ভ্রমাত্মক, তাহার কোন কারণ বা যুক্তি প্রদর্শিত হয় নাই।