পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
সিরাজদ্দৌলা

করিয়া আমাকে সংবাদ দিতে আসিয়াছেন; আমি পলায়ন করিতে প্রস্তুত কিনা কেবল তাহাই জানিবার জন্য গুপ্তপথে দুর্গপ্রবেশ করিয়াছেন। সে সময়ে আমাদের কাছে অধিক প্রহরী ছিল না; যাহারা ছিল তাহারাও সন্দেহশূন্য হইয়া দূরে দূরে পদচারণ করিতেছিল,ইচ্ছা থাকিলে পলায়ন করিতে কোনরূপ অসুবিধা হইত না। কিন্তু যাহারা আমার আজ্ঞায় দুর্গরক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া অবশেষে আমার সঙ্গে শত্রুহস্তে বন্দী হইয়াছেন, তাহাদিগকে অসহায় অবস্থায় নবাবের হাতে সমর্পণ করিয়া, একাকী প্রাণ লইয়া পলায়ন করিতে প্রবৃত্তি হইল না। তখন লিচ্ অবলীলাক্রমে বলিয়া উঠিলেন যে,— কেবল আমার জন্য তিনি ব্যাকুল হইয়াছিলেন; আমিই যদি পলায়ন না করিলাম, তবে তিনি আর একাকী পলায়ন করিবেন কেন? বলা বাহুল্য যে, কাহারও পলায়ন করা হইল না!

 “যাহারা এতক্ষণ স্থান খুঁজিয়া বেড়াইতেছিল, তাহারা আসিয়া পাহারা-বারিকের বামপার্শ্বস্থ গৃহমধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য আমাদিগকে আদেশ করিতে লাগিল। সেই বারিকে সিপাহীদিগের নিদ্রার জন্য কতকগুলি তক্তাপোষ ছিল, বায়ুসমাগমেরও অসুবিধা ছিল না;—ভাবিলাম বুঝি সমুদয় দিনের রণশ্রান্তি দূর করিবার সদুপায় হইল; সেইজন্য ইচ্ছাপূর্ব্বক তাহার মধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলাম। এই বারিকের ভিতর দিয়াই অন্ধকুপকারাগারের প্রবেশদ্বার! কতকগুলি সিপাহী আসিয়া বন্দুক উঠাইয়া সেই অন্ধকূপে প্রবেশ করিবার জন্য ইঙ্গিত করিতে লাগিল। নিরস্ত্র দেহে সে ইঙ্গিত অবহেলা করিতে সাহস হইল না। যাহারা পশ্চাতে ছিল, তাহারাও বেগে ঠেলিয়া আসিতে লাগিল। সম্মুখের তরঙ্গ যেমন পশ্চাতের তরঙ্গাঘাতে কেবল সম্মু