পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্ধকূপে প্রবেশ।
১৯১

খের দিকেই ছুটিয়া চলে, আমরাও সেইরূপ তাড়াতাড়ি পাড়াপাড়ি করিয়া অন্ধকূপের মধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলাম! সে অন্ধকূপ যে এত ক্ষুদ্রায়তন তাহা জানিতাম না; আমি কেন, দুই একজন সৈনিক ভিন্ন কেহই তাহা জানিতেন না। যদি জানিতাম যে সত্য সত্যই তাহা অন্ধকুপ, তবে বরং আদেশ লঙ্ঘন করিয়া প্রহরীহস্তে জীবনবিসর্জ্জন করিতাম; তথাপি সে অন্ধকূপের মধ্যে ইচ্ছাপুর্ব্বক পদার্পণ করিতাম না!

 “আমিই সর্ব্বাগ্রে প্রবেশ করিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বেলি, জেন্‌কস্, কুক্, কোলস্, স্কট, রেভেলি এবং বুকাননও প্রবেশ করিলেন। দ্বারের নিকটেই জানালা; আমি প্রবেশ করিয়া সেই জানালার ধারে আশ্রয় পাইলাম। কোল্‌স্‌ এবং স্কট্ উভয়েই আহত; সুতরাং তাহাদিগকে সেখানে ডাকিয়া লইলাম। আর আর সকলে আমাদের আশে পাশে যে যেখানে পারিল, ঘিরিয়া দাঁড়াইতে লাগিল। দরজা বন্ধ হইল। আট্‌টা বাজিয়া গেল।

 ‘এইরূপে রণ-পরিশ্রান্ত ১৪৬ জন হতভাগা নিদারুণ নিদাঘসন্তপ্ত অন্ধকার রজনীতে বায়ুসমাগমবিরহিত ১৮ ফুট আয়তনের একটি ক্ষুদ্র কক্ষে বন্দী হইল! একটি মাত্রদ্বার, তাহাও উত্তরদিকে। দুইটিমাত্র জানালা, তাহাও লৌহশলাকাবেষ্টিত। একটু যে শীতল বাতাস পাইব তাহারও উপায় নাই! এই অবস্থা স্মরণ করিলে, আমাদের দুঃখ, দুর্দশা কিয়ৎপরিমাণে অনুভব করা সহজ হইবে।

 “আমাদের যে কত না দুর্গতি হইবে, তাহার ভয়াবহ দৃশ্যপট যেন জীবন্তভাবে চক্ষুর সম্মুখে ফুটিয়া উঠিতে লাগিল; কারাকক্ষের আয়তন দেখিয়াই চক্ষুস্থির হইয়া গেল। সকলে মিলিয়া রুদ্ধদ্বার ভাঙ্গিয়া ফেলি