পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
সিরাজদ্দৌলা।

করিতে কৃতসংকল্প হইলাম। কেয়ারী ধন্যবাদ দিলেন; কিন্তু তিনি আর আমার স্থান অধিকার করিতে পারিলেন না—আমার কাঁধের উপর একজন ওলন্দাজ বসিয়াছিল, স্থানটুকু সেই অধিকার করিয়া ফেলিল। কেয়ারী তাঁহার বিশালবাহু বিস্তার করিয়া, ভিড় ঠেলিয়া আমাকে গৃহ মধ্যে টানিয়া আনিলেন; কিন্তু তাঁহার সকল শক্তি সহসা ভাঙ্গিয়া পড়িল; দেখিতে না দেখিতে কেয়ারী সহসা পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইলেন!

 “গৃহমধ্যে আসিলেও কিছুক্ষণ কথঞ্চিৎ সংজ্ঞা ছিল। তখন কিন্তু যাতনা-বোধ ছিল না। তাহার পরে সকল সংজ্ঞা বিলুপ্ত হইয়া গেল! প্রভাতে কুক্ সাহেবের প্রস্তাবে লসিংটন এবং ওয়াল্‌কট্‌ মৃতদেহের ভিতর হইতে আমাকে টানিয়া বাহির করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তখন একেবারে সংজ্ঞাহীন। তাহার পর প্রভাতের শীতল বাতাস লাগিয়া চেতনাশক্তি ধীরে ধীরে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়াছিল।”[১]

 ২১শে জুন প্রাতঃকালে নবাব সিরাজদ্দৌলা যখন হলওয়েলকে ডাকিয়া পাঠাইলেন, প্রহরিগণ তখন দুর্দ্দশার কথা জ্ঞাপন করিল। হলওয়েল নিজেই লিখিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহাদের দুর্দ্দশার কথা শুনিবামাত্র সিরাজদ্দৌলা তাঁহাকে কারামুক্ত করিয়া জীবনরক্ষা করিয়াছিলেন। হলওয়েল যখন নবাবদরবারে উপনীত হইলেন, তখন তিনি একরূপ শক্তিহীন,—শুষ্ককণ্ঠে জিহ্বার জড়তা বৃদ্ধি হইয়া বাক্‌শক্তি রহিত হইয়া গিয়াছে। হলওয়েল লিখিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহার দুর্দ্দশা দেখিয়া সিরাজদ্দৌলা তাঁহাকে বসিবার জন্য আসন দান করিয়া জলপান

  1. “Letter from J. Z. Holwell, Esq., to William Davis Esq., from on board the Syren sloop, the 28th of February 1757."—Printed in Holwell's Tracts.