পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৬
সিরাজদ্দৌলা।

 রাজা মাণিকচাঁদ এত সহজে ইংরাজের বশীভূত হইলেন কেন, ইতিহাসে সে রহস্য মীমাংসিত হয় নাই। মাণিকচাঁদ যেরূপ চরিত্রের লোক, বাতাস বুঝিয়া পাল তুলিয়া দিতে চিরদিন ক্ষিপ্রহস্ত। সিরাজ যখন সসৈন্যে কলিকাতাভিমুখে যুদ্ধযাত্রা করেন, জগৎশেঠ এবং খোজা বাজিদ কৃতাঞ্জলি হইয়াও যখন সিরাজদ্দৌলাকে সংকল্পচ্যুত করিতে পারেন নাই, মাণিকচাঁদ তখন নবাবের নিকট সরফরাজ থাকিবার আশায় সবিশেষ উৎসাহের সঙ্গে ইংরাজদলনে অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করিতে ত্রুটি করেন নাই। কলিকাতা জয় করা হইল, কলিকাতার নাম পর্যন্তও বিলুপ্ত হইয়া গেল, কলিকাতার সৌধধবল ইন্দ্রপুরী হইতে ইংরাজ গৃহতাড়িত হইল,—মাণিকচঁদ বুঝিলেন যে, আর বিনাযুদ্ধে “আলিনগরে” ইংরাজের পদার্পণ করিবার সম্ভাবনা রহিল না। কিন্তু মাণিকচাঁদ জানিতেন যে, বিপদে পড়িয়া বৃটিশসিংহ কিছুদিনের জন্য পলায়ন করিতে বাধ্য হইলেও, অবসর পাইবামাত্র আবার বীরদর্পে কলিকাতার উপর হুঙ্কার করিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িবে, এবং সে আক্রমণে মাণিকচাঁদেরই সমূহ সর্ব্বনাশ হইবে। তিনি সেই জন্য মূলাজোড়ে এক নূতন দুর্গ নির্ম্মাণ করিয়া সেখানে ধনরত্ন ও স্ত্রীপুত্রাদি সুরক্ষিত করিতেছিলেন। ইতিমধ্যে আবার বাতাস ফিরিয়া গেল। সিরাজদ্দৌলার মতি গতি শান্তভাব অবলম্বন করিল; ইংরাজদিগের পুনরাগমনের আশার বীজ অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল; সুতরাং তাঁহাদের করুণক্রন্দনে উপেক্ষা প্রদর্শন করা মাণিকচাঁদের নিকট বুদ্ধিমানের কার্য্য বলিয়া প্রতীয়মান হইল না। উমিচাঁদ অনুরোধ জানাইবামাত্র মাণিকচাঁদ ইংরাজদিগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াইবার জন্য পত্র লিখিয়া পাঠাইলেন।[১]

  1. Omichand and Manikchand were at this time in friendly