পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
সিরাজদ্দৌলা।

 সিরাজদ্দৌলা ইহার বিন্দু বিসর্গও জানিতে পারিলেন না; তাঁহার নিকট পূর্ব্ববৎ কাকুতি মিনতি চলিতে লাগিল। তিনি যদি ঘুণাক্ষরেও এই রাজবিদ্রোহিতার সন্ধান পাইতেন, তবে হয়ত ফলতার বন্দর ইংরাজের সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হইতে বিলম্ব ঘটিত না।

 এদিকে মাদ্রাজনিবাসী ইংরাজগণ দুইমাসের মধ্যেও তর্কবিতর্কের শেষ করিতে পারিলেন না। ইংরাজের ফৌজ অপ্রচুর; চিরশত্রু ফরাসী হয়ত শীঘ্রই ভারতবর্ষ আক্রমণ করিবে;—এমন সময়ে মাদ্রাজ হইতে পল্টন পাঠাইয়া দেওয়া কর্ত্তব্য কি না—সে বিষয়ে বিষম মতভেদ উপস্থিত হইতে লাগিল। এই সকল কারণে অনেক বিলম্ব হইয়া গেল,অবশেষে স্থির হইল যে, অন্যান্য প্রদেশের ভাগ্যে যাহা হয় হউক, সর্ব্বাগ্রে কলিকাতার উদ্ধারসাধন করাই কর্ত্তব্য। এই সময়ে বিখ্যাত ইতিহাসলেখক অর্ম্মি সাহেব মাদ্রাজ-দরবারের সদস্য ছিলেন, তিনি এই সকল তর্ক-যুদ্ধের সবিস্তার ইতিহাস লিখিয়া গিয়াছেন।[১] কলিকাতার উদ্ধারসাধন করা স্থির হইল বটে, কিন্তু কাহাকে সেনাপতি করা হইবে, তাহা সহজে স্থির হইল না।

 পিগট সাহেব মাদ্রাজের গভর্ণর। পদগগৗরবে তিনিই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু যুদ্ধব্যবসায়ে তাহার কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই। সেনানায়কদিগের মধ্যে কর্ণেল অল্‌ডারক্রন্‌ সর্ব্বজ্যেষ্ঠ; কিন্তু বাঙ্গালাদেশের যুদ্ধকলহে তাঁহারও কোনরূপ অভিজ্ঞতা নাই। কর্ণেল লরেন্সের যোগ্যতা আছে, অভিজ্ঞতাও আছে,—সকল বিষয়েই তিনি পরিপক্ক। কিন্তু তিনি হাঁপানী রোগে জর্জ্জরিত,—বাঙ্গালার জলবায়ু তাঁহার ধাতুতে সহ্য হইবে না। এইরূপে যখন একে একে সকল সেনা-

  1. Ormę, vol. II. 84-89.