পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
সিরাজদ্দৌলা।

কীর্ত্তিকলাপ পর্য্যবেক্ষণ করিয়া আতঙ্কযুক্ত হইলেন। আজ হুগলী বিপর্য্যস্ত হইল, কাল হয়ত অন্য কোন স্থান বিধ্বস্ত হইবে। সিরাজ দেখিলেন যে, ইংরাজেরা দ্বিতীয় বর্গীর হাঙ্গামার সূত্রপাত করিবে;—কত সম্পন্ন জনপদ শ্মশান হইবে, কত নিরীহ নাগরিক হাহাকার করিবে;—কত রুধিরকর্দ্দমে বঙ্গভূমি কলঙ্কিত হইবে; এবং এত করিয়াও একদিনের জন্য শান্তিসুখ উপভোগ করিবার অবসর ঘটিবে না! ইংরাজদিগকে বশীভূত করিবার দুইটিমাত্র সদুপায়;—হয় শত্রুতাসাধনে, না হয় মিত্রবন্ধনে; হয় করাল কৃপাণমুখে, না হয় লেখনীসাহায্যে। আলিবর্দ্দীর অন্তিম উপদেশ স্মরণ করিয়া শত্রুতাসাধন করিয়া দেখিলেন;—তাহাতে হিতে বিপরীত হইল। ইংরাজদমন হইল না; বরং চিরশত্রুতার সূত্রপাত হইল। সুতরাং মিত্রতা-বন্ধনে ইংরাজদিগকে বশীভূত করিবার জন্যই সিরাজদ্দৌলা ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। ইহাতে তাঁহার প্রজাহিতৈষণা ও তীক্ষ্ণবুদ্ধির পরিচয় পাইয়া কুচক্রী মন্ত্রিদল তাঁহার প্রস্তাবে নানা প্রকারে বাধা প্রদান করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন।

 নওয়াজেস মোহম্মদ এবং শওকতজঙ্গের পরলোকগমনে কুচক্রিদলের সকল আশাই নির্ম্মূল হইয়াছিল। ইংরাজ একমাত্র শেষ সম্বল। তাঁহারা যদি সিরাজের সঙ্গে মিত্রতাসূত্রে আবদ্ধ হইবার অবসর প্রাপ্ত হন, তাহ হইলে সিরাজ নিশ্চিন্ত হইবেন। তাহাতে দেশের কল্যাণ, কিন্তু দুষ্টদলের সর্ব্বনাশ। নবাব এত দিন বিপদবেষ্টিত বলিয়াই তাঁহারা বাঁচিয়া রহিয়াছেন। সুতরাং তাঁহাকে নিশ্চিন্ত হইবার অবসর প্রদান করিতে কাহারও সাহস হইল না। ইংরাজের সঙ্গে চিরশত্রুতা সঞ্জীবিত রাখিয়া সিরাজদ্দৌলাকে সর্ব্বদা সশঙ্কিত রাখিবার জন্যই সন্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ আরম্ভ হইল। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা আর কাহারও কথায় কর্ণপাত করিতে সম্মত হইলেন না।