পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কুসংস্কার।
৩৩১

ফর মুসলমানের পরমপবিত্র ধর্ম্মগ্রন্থ মাথায় লইয়া, এক হাত প্রাণাধিক জ্যেষ্ঠ পুত্র মীরণের মাথায় রাখিয়া আর এক হাতে কলম ধরিয়া স্বাক্ষর করিলেন:—“ঈশ্বর এবং পয়গম্বরের দোহাই দিয়া শপথ করিতেছি, যতক্ষণ প্রাণ ততক্ষণ এই সন্ধিপত্রের অঙ্গীকার পালন করিতে বাধ্য থাকিলাম।”[১]

 এই গুপ্ত সন্ধিপত্র লইয়া মীরজাফরের বিশ্বাসী অনুচর উমরবেগ জমাদার ১০ই জুন কলিকাতায় উপনীত হইলেন। গুপ্ত মন্ত্রণার কথা তখন একরূপ ঢাকে ঢোলে বাজিয়া উঠিয়াছে! আর কালবিলম্ব করিবার অবসর রহিল না;—ক্লাইব যুদ্ধযাত্রার জন্য বদ্ধপরিকর হইয়া সগর্ব্বে সিরাজদ্দৌলাকে পত্র লিখিতে বসিলেন।

 মুসলমান-ইতিহাস-লেখকের কথার আভাসে বোধ হয় যে,—মীরজাফর কোরাণস্পর্শ করিয়াও ইংরাজদিগের বিশ্বাস জন্মাইতে পারেন নাই। তিনি যে সত্য সত্যই সন্ধিপত্রের লিখিত সমস্ত প্রতিশ্রুতি যথাধর্ম্ম পালন করিবেন, তজ্জন্য “উমাচরণ ও জগৎশেঠকে জামিন থাকিতে হইয়াছিল।”[২]

 এ দেশের লোক বড়ই কুসংস্কারাচ্ছন্ন;—তাহারা এখনও বিশ্বাস করে যে, মীরজাফর পুত্রের মাথায় হাত রাখিয়া কোরাণ স্পর্শ করিয়া কৃতঘ্নের ন্যায় ফিরিঙ্গীর সঙ্গে গোপনে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করিয়াছিলেন, সেই জন্য বিধাতার অভিসম্পাতে তাঁহার পাপহস্ত কুষ্ঠরোগে খসিয়া পড়িয়াছিল,[৩] এবং

  1. “I swear by God and the Prophet of God to abide by the terms of this treaty while I have life.”
  2. “জামিন্ উসকে ওহি দোনো মহাজনান্ মজকুরা হুয়ে।”—মুতক্ষরীণ।
  3. মীরজাফরের মৃত্যুসময়ে তাঁহার পাপক্ষালনের জন্য মহারাজ নন্দকুমার শ্রীশ্রীশ্বরী কিরীটেশ্বরী দেবীর চরণামৃত তাঁহার ওষ্ঠে সেচন করিয়া এই বিশ্বাসের পরিচয় দিয়াছিলেন। “Gholam Hossein has a story that, when Mir Jaffar was dying, Nanda Kumar gave him water that had bathed the image of Kiriteshwari,”—H. Beveridge; c. S.