ফর মুসলমানের পরমপবিত্র ধর্ম্মগ্রন্থ মাথায় লইয়া, এক হাত প্রাণাধিক জ্যেষ্ঠ পুত্র মীরণের মাথায় রাখিয়া আর এক হাতে কলম ধরিয়া স্বাক্ষর করিলেন:—“ঈশ্বর এবং পয়গম্বরের দোহাই দিয়া শপথ করিতেছি, যতক্ষণ প্রাণ ততক্ষণ এই সন্ধিপত্রের অঙ্গীকার পালন করিতে বাধ্য থাকিলাম।”[১]
এই গুপ্ত সন্ধিপত্র লইয়া মীরজাফরের বিশ্বাসী অনুচর উমরবেগ জমাদার ১০ই জুন কলিকাতায় উপনীত হইলেন। গুপ্ত মন্ত্রণার কথা তখন একরূপ ঢাকে ঢোলে বাজিয়া উঠিয়াছে! আর কালবিলম্ব করিবার অবসর রহিল না;—ক্লাইব যুদ্ধযাত্রার জন্য বদ্ধপরিকর হইয়া সগর্ব্বে সিরাজদ্দৌলাকে পত্র লিখিতে বসিলেন।
মুসলমান-ইতিহাস-লেখকের কথার আভাসে বোধ হয় যে,—মীরজাফর কোরাণস্পর্শ করিয়াও ইংরাজদিগের বিশ্বাস জন্মাইতে পারেন নাই। তিনি যে সত্য সত্যই সন্ধিপত্রের লিখিত সমস্ত প্রতিশ্রুতি যথাধর্ম্ম পালন করিবেন, তজ্জন্য “উমাচরণ ও জগৎশেঠকে জামিন থাকিতে হইয়াছিল।”[২]
এ দেশের লোক বড়ই কুসংস্কারাচ্ছন্ন;—তাহারা এখনও বিশ্বাস করে যে, মীরজাফর পুত্রের মাথায় হাত রাখিয়া কোরাণ স্পর্শ করিয়া কৃতঘ্নের ন্যায় ফিরিঙ্গীর সঙ্গে গোপনে সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করিয়াছিলেন, সেই জন্য বিধাতার অভিসম্পাতে তাঁহার পাপহস্ত কুষ্ঠরোগে খসিয়া পড়িয়াছিল,[৩] এবং
- ↑ “I swear by God and the Prophet of God to abide by the terms of this treaty while I have life.”
- ↑ “জামিন্ উসকে ওহি দোনো মহাজনান্ মজকুরা হুয়ে।”—মুতক্ষরীণ।
- ↑ মীরজাফরের মৃত্যুসময়ে তাঁহার পাপক্ষালনের জন্য মহারাজ নন্দকুমার শ্রীশ্রীশ্বরী কিরীটেশ্বরী দেবীর চরণামৃত তাঁহার ওষ্ঠে সেচন করিয়া এই বিশ্বাসের পরিচয় দিয়াছিলেন। “Gholam Hossein has a story that, when Mir Jaffar was dying, Nanda Kumar gave him water that had bathed the image of Kiriteshwari,”—H. Beveridge; c. S.