পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
সিরাজদ্দৌলা।

সর্ব্বা হইয়া উঠিলেন। বর্গীর হাঙ্গামায় বঙ্গভূমি যখন হাহাকার করিয়া আর্ত্তনাদ করিতেছিল, সিরাজদ্দৌলা তখন প্রমোদনিদ্রায় সুখস্বপ্ন দেখিতেছিলেন -রাজবল্লভ সুযোগ পাইয়া শক্তিসঞ্চয় করিতেছিলেন। কালক্রমে সিরাজের মোহনিদ্রা ভাঙ্গিয়াছিল; কিন্তু রাজবল্লভ তখন এতই শক্তিশালী যে, সিরাজ আর ঠাহাকে ক্ষুদ্রশক্তিতে বশীভূত করিতে পারিলেন না। ইহাই সিরাজদ্দৌলার সর্বনাশের মূলসূত্র— ইহাই ইতিহাসের গূঢ়মর্ম্ম!

 ১৭৪১ খ্রীষ্টাব্দের সম-সময়ে বিপুল মহারাষ্ট্রবল দুইদলে বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছিল। বেরার প্রদেশে রঘুজি ভোসলা এবং পুনা প্রদেশে বালাজি,—উভয়েই পেশোয়াপদ লাভ করিবার জন্য প্রবল প্রতিদ্বন্দ্ব আরম্ভ করিয়াছিলেন। রঘুজির আজ্ঞাবহ সেনানায়ক ভাস্কর পণ্ডিত বাঙ্গলাদেশে প্রথম পদার্পণ করেন। কিছুদিন পরে বালাজি বাহুবলে বাদশাহকে বশীভুত করিয়া ১১ লক্ষ টাকা চৌথ আদায়ের ফরমাণ কইয়া বিহার অঞ্চল লুণ্ঠন করিতে করিতে বাঙ্গালাদেশে উপনীত হইলেন।[১]

 দুই দিক হইতে দুইটি প্রবল শক্ত এক সঙ্গে “যুদ্ধং দেহি” রবে সগর্ব্বে অগ্রসর হইতেছে; আলিবর্দ্দী একাকী কোন দিক্‌ রক্ষা করিবেন? অগত্যা একপক্ষকে হস্তগত করিয়া অপর পক্ষ আক্রমণ করাই স্থির হইল। পরামর্শ স্থির হইল বটে, কিন্তু বালাজিকে হস্তগত করিতে যে পরিমাণ উৎকোচ দিতে হইল, তাহাতে রাজকোষ শুন্য করিয়াও আলিবর্দ্দী কুলাইয়া উঠিতে পারলেন না। অবশেষে জমীদারদিগের নিকট ঋণ গ্রহণ করিয়া কোনরূপে লজ্জারক্ষা করিলেন, এবং বালাজির

  1. Stewart's History of Bengal.