পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
সিরাজদ্দৌলা।

সিংহাসন আক্রমণের উদ্যোগ করিলেন। আলিবর্দ্দী বিদ্রোহদলন করিলেন, কিন্তু মুস্তাফাকে নির্ব্বাসিত করিয়াই নিরস্ত হইলেন; মুস্তাফা মুঙ্গের এবং রাজমহল লুণ্ঠন করিয়া মহারাষ্ট্রদলে মিশিয়া পড়িলেন।

 ভাস্কর পণ্ডিতের হত্যাকাণ্ডের কথা মহারাষ্ট্রদেশে প্রচারিত হইবা- মাত্র রঘুজি স্বয়ং বাঙ্গালাদেশে পদার্পণ করিলেন। লোকে পৈতৃক ভিটার মায়া মমতা ছাড়িয়া প্রাণ লইয়া দূরস্থানে পলায়ন করিতে লাগিল, গ্রাম নগর জনশূন্য হইয়া গেল, শস্যক্ষেত্র কণ্টকবনে পরিণত হইল, শিল্পবাণিজ্য ক্রমেই বন্ধ হইয়া আসিতে লাগিল![১]

 চারিদিকে মহাবিপ্লব। আলিবর্দ্দী একাকী অসিহস্তে ছুটাছুটি করিয়া ক্রমেই অবসন্ন হইয়া পড়িতে লাগিলেন। অবশেষে একাকী আর পারিয়া উঠিলেন না; আপন আপন ধন প্রাণ রক্ষার অন্য সকলকেই যথাযোগ্য ক্ষমতা দিতে বাধ্য হইলেন। সেই ক্ষমতায় জমীদারগণ সৈন্যবল বৃদ্ধি করিলেন; ইংরাজগণ কাশিমবাজারে একটি ছোট খাট রকমের দুর্গ নির্ম্মাণ করিলেন; কলিকাতা রক্ষার জন্য মহারাষ্ট্রখাত খনন করিয়া কলিকাতা ও অন্যান্য বাণিজ্য স্থানে সৈন্য সমাবেশ করিতে আরম্ভ করিলেন। মহারাষ্ট্রবিপ্লবে নবাবের রাজকোষ শূন্য হইতে লাগিল বিদেশীয় বণিকদিগের পদোন্নতির সূত্রপাত হইল, দেশের লোকের সঙ্গে তাঁহাদের আত্মীয়তা ঘনীভূত হইয়া উঠিল। কালে ইহা হইতেই যে মুসলমান-শক্তি পদদলিত হইতে পারে, আলিবর্দ্দী তাহা অস্বীকার করিতেন না; কিন্তু কি করিবেন? নিতান্ত নিরুপায় হইয়াই তাঁহাকে এই পথ অবলম্বন করিতে হইল।

  1. Despatch to the Court of Directors.