পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
সিরাজদ্দৌলা

শোকের অবরুদ্ধ কণ্ঠোচ্ছ্বাস নিবারণ করিয়া দুহিতার আয়োজন করিতে লাগিলেন। পদচ্যুত ও পদগৌরবান্বিত সমুদায় সেনাপতিদিগকে সম্মিলিত করিয়া আলিবর্দী যখন করুণ বিলাপে এই শোক-কাহিনী বর্ণনা করিতে আরম্ভ করিলেন, তখন সকলেই একে কোরাণ স্পর্শ করিয়া অসিহস্তে তাঁহার সঙ্গে প্রাণ-বিসর্জ্জন করিবার জন্য শপথ করিলেন। এই উপলক্ষে কলহ বিবাদ মিটিয়া গেল। মীরজাফর পুনরায় সেনাপতিপদে নিযুক্ত হইলে, আতাউল্লাও অসিহস্তে নবাবের পার্শ্বে আসিয়া দাঁড়াইতে ত্রুটি করিলেন না। আতাউল্লার সঙ্গে হাজি অহ্‌মদের কন্যার বিবাহ হইয়াছিল, আতাউল্লার কন্যার সঙ্গে সিরাজদ্দৌলার বিবাহের প্রস্তাব চলিতে ছিল সুতরাং আতাউল্লাও একজন ঘনিষ্ঠ কুটুম্ব।

 আলিবর্দ্দী গতানুশোচনা পরিত্যাগ করিয়া পাটনাভিমুখে যুদ্ধযাত্রা করিবেন, ঠিক সেই সময়ে উড়িষ্যাপ্রান্তে মহারাষ্ট্রীয়দিগের বিজয় ভেরী বাজিয়া উঠিল। এরপর আর আলিবর্দ্দী বর্গীর হাঙ্গামার গতিরোধ করিতে অগ্রসর হইতে পারলেন না। রাজধানীর গমনাগমনপথ রক্ষা করিবার জন্য সাইয়েদ অহ্‌মদকে ভগবানগোলায় পাঠাইয়া দিলেন; নওয়াজেস্‌ এবং আতাউল্লার অধীনে পাঁচ সহস্র সৈন্য রাখিয়া তাহাদের উপর রাজধানী রক্ষার ভারার্পণ করিলেন; এবং চারিদিকে ঘোষণা দিলেন যে, এবার প্রজার ধন প্রাণ রক্ষার ভার তাহাদের উপর, তাহাদের শক্তি এবং সাহস থাকে, তাহারা বাহুবলে আত্মরক্ষা করিবে, না পারে প্রাণ লইয়া পলায়ন করিবে।” লোকে যে যেখানে সুবিধা পাইল, পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল![১]

  1. Stewart's History of Bengal.