পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
সিরাজদ্দৌলা
স্বদেশ-অনুরাগ আছে, তোমার কি মনে হয় কারো হৃদয়ে জাতীয়তা আছে, তোমার কি মনে হয় মাতৃভূমির ভালমন্দ কেউ চিন্তা করে? না! যদি বাঙ্গলার হিন্দু-মুসলমানের কিছুমাত্র হৃদয় থাক্‌তো স্বদেশের উপর যদি তাদের কিছুমাত্র স্নেহ থাক্‌তো, যদি স্বদেশের উন্নতির প্রতি কিছুমাত্র দৃষ্টি থাকতো, তা’হলে কি পরস্পর পরস্পরের প্রতি দ্বেষাদ্বেষ করে? তুমি কি এখনো বোঝো নি, যে যারা যারা তোমাদের সহায় হয়েছে, তাদের সকলের এক স্বার্থ নয়,—বিশ্বাসঘাতক, ষড়যন্ত্রকারীরা এক স্বার্থে চালিত নয়, তা কি বুঝতে পারো নি? সেনানায়ক বিশ্বাসঘাতক ইয়ারলতিফও পত্র লিখেছিল,—“নবাবী আমায় দাও,” মীরজাফরও পত্র লিখেছে,—“নবাবী আমায় দাও;” রাজবল্লভ স্বয়ং রাজা হ’তে চায়, ঘসেটী বেগমের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে তা সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়েছে;—রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ মহাতাবচাঁদ ও স্বরূপচাঁদ, মাণিকচাঁদ,—সকলেরই মনোগত কিসে রাজ্য করগত হবে! রাজ্য করগত করা, রাজ্যের মঙ্গলার্থে নয়, দুর্দ্দান্ত নবাবকে দমন কর্‌বার জন্য নয়, প্রজার শান্তির জন্য নয়, স্বর্গের জন্য! যদি না স্বার্থপর হ’তো, তুমি সকলের চক্ষে ধূলি দিয়ে, প্রতারিত ক’র্‌তে পার্‌তে না। সাহেব, তোমাদের স্বার্থ একরূপ,—পরস্পর স্বার্থের জন্য বিবাদ করে,—কিন্তু ইংরাজ-শত্রুর বিরুদ্ধে সকলে মিলে ভ্রাতৃভাবে অস্ত্র ধারণ করো। সে স্বার্থ বাঙ্গলার হিন্দু-মুসলমানের নয়; অতি হীন স্বার্থ, সেই হীন স্বার্থের আবরণে সকলে অন্ধ হয়েছে,—তোমার কৌশলে নয়। যদি নিজ নিজ স্বার্থে এরূপ অন্ধ না হতো, তাহ’লে বুঝতো, সে দূরদেশ হ’তে ছ’মাস সমুদ্রে ভেসে, নিজ স্বার্থ নিমিত্ত এসেছ, তাদের স্বার্থের জন্য নয়। যুদ্ধে প্রাণ দিয়ে