পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
সিরাজদ্দৌলা
বালিকা অনাহারে মরেছে। আমার কঠিন প্রাণ, অনাহারে কেন বেরুবে! আমার দেহ বজ্র নির্ম্মিত! এ সময়ে যদি কেউ বন্ধু থাকে, যদি আমায় গরল প্রদান করে, আমি তার মঙ্গল কামনা ক’রে প্রাণত্যাগ করি। এততেও মৃত্যু হলো না, এত যন্ত্রণাও সহ্য হয়!

মীরণের প্রবেশ

মীরণ। প্রেয়সি, কার জন্য ভাব্‌ছো, কার জন্যে কাঁদ্‌ছো? সিরাজ তোমায় তাল্লাক দিয়ে ত্যাগ করেছে। আমার তুমি হৃদয়েশ্বরী, আমার হৃদয়ে তোমার স্থান। সিরাজের শত শত বেগম ছিলো;—আমি তোমার পদপ্রান্তে প’ড়ে থাক্‌বো—।
লুৎফ। মীরণ, তুমি কি সয়তান,—অসহায়কে পীড়ন কর্‌তে এসেছ? তুমি কি পশু? তুমি কি সম্বন্ধ-বিচার শূন্য? আমি তোমার মাতৃস্থানীয়, আমার উপর এই উক্তি? মীরণ তোমার কল্যাণ হোক, আমার প্রাণবধ করো, আমি তোমায় আশীর্ব্বাদ ক’রে যাই। অবলাকে রক্ষা করা মুসলমানের ধর্ম্ম, সতীর সতীত্ব রক্ষা মুসলমানের ধর্ম্ম;—তুমি মুসলমান, লোকধর্ম্ম বিসর্জ্জন দিয়ো না। দয়া করো—মীরণ, দয়া করো—এ স্থান ত্যাগ করো। কঠিন যন্ত্রণা দিয়ে আমার প্রাণবধ করো;—অনাহারে, মাংস ছিন্ন ক’রে, যেরূপ তোমার অভিরুচি হয়, সেইরূপে আমায় বধ করো। মীরণ, এস্থান পরিত্যাগ করো, আর কুবচন বলো না।
মীরণ। প্রেয়সি, তুমি আমায় চেনো না। যখন তোমার অঙ্কুরিত যৌবন, তখন তোমার অনুসরণ করেছি; যখন নবাব-গৃহে তুমি বাঁদী, যখন সিরাজ-মহিষী হও নাই, তখন তোমার লালসায় নারী-বেশে অন্তঃপুরে প্রবেশ করেছিলেম, আলিবর্দ্দীর দণ্ড ভয় করি নাই। তোমার অপরূপ সৌন্দর্য্য আমায় দিবানিশি দগ্ধ