পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
সিরাজদ্দৌলা
নিতেম, কিম্বা যদি নবাবের পায়ে-হাতে ধ'রে পড়তেম, তাহ’লে এ দুর্দ্দশা হ’তো না। পিতা বুঝ্‌লেন না;—নবাব ক্রোধনস্বভাব বটে, ক্রোধ হ’লে দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে না, কিন্তু দেখেছি অতিশয় দোষ ক’রে গিয়ে মার্জ্জনা চাইলে, মার্জ্জনা পায়! যতই দোষ থাকুক, মেজাজ অতি উচ্চ। হায় হায়, কেন ফিরিঙ্গির আশ্রয়ে এলেম!
উমি। বাবা, আগে কে জানে বলো, যে এরা এমন ধড়িবাজ! মনে কর্‌তেম বাঁদুরে জাত,—ডাব চেনে না, ছোবড়া খেতে যায়; পাল্কীর ছাদে উঠে বসে, এক পয়সার সামগ্রী নিয়ে দুটো টাকা ফেলে দেয়। ব্যাটারা কত পায়ে-হাতে ধ’র্‌লে, বললে একটু কুঠি ক’রে দাও, আমরা এখানে ব্যবসা কর্‌বো।
কৃষ্ণ। ম’শায় এরা বড় চতুর। এক পয়সার সামগ্রী নিয়ে দুটো টাকা ফেলে দেয় সত্য—সামান্য টাকা খরচ ক'রে আমিরী দেখায়—কিন্তু মনে করেন কি, ব্যবসা আপনি ওদের চেয়ে জানেন? দেখুন আমাদের দেশ, আপনার নিকট ব্যবসা-বাণিজ্য শিখ্‌লে, ক’বছরের মধ্যে ক’টা কুঠি করেছে দেখুন! কি অপমানিতই হলেম। আমাদের সামান্য চাকরকে যেরূপ কুবচন বলি নাই, তা অপেক্ষাও অকথ্য ব’লে আমায় তিরস্কার করলে। উঃ—এত অদৃষ্টে ছিল! অতি সামান্য ব্যক্তি, উদরের জ্বালায় এ দেশে এসেছে, কিন্তু যে দুর্ব্বাক্য বল্‌লে, স্বয়ং নবাব এরূপ বলেন না! হায়—হায় স্বদেশীকে বিশ্বাস না করার উপযুক্ত শাস্তি পেলেম!
উমি। ব্যাটারা মনে ক’রেছে আমায় কয়েদ ক’রে আরও টাকা হাতাবে। আমি আর এক কাণাকড়িও ছাড়বো না, চিঁড়ে খেয়ে মরি, ফাঁসি দিগ—তাও কবুল্—এক কড়িও ছাড়বো না।