পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূতা, কৰ্মচারী, স্ত্র ও পুরুষ সকলের মুখেই আনন্দ। সকলের মুখেই বিবাহের কথা। যতই বিবা২ে৭ দিন নিকটবতী হইতে লাগিল, স্বৰ্ণ ততই নিদাঘ-তাপ-দগ্ধ গোলাপের নায়, শুষ্ক এবং কৰ্দমে পতিত কমলের ন্যায় মলিন হইতে লাগিল । কি উপায় অবলম্বন করিলে, এ বিবাহ-পাশ হইতে উদ্ধার পাওয়া যাইবে, তাহা ভাবিয়া তাবিয়া আকুল হইল। ঈসা খাকে প্ৰাণ-মন সমৰ্পণ করিয়া, তাহাকে হৃদয়-সিংহাসনে বরণ কবিয়া বসাইয়া,-অন্যকে পাণিদান করিবে? না! না! তােহা কখনও হইবে না। এমন ব্যভিচার, এমন বিশ্বাসঘাতকতা, এমন অধৰ্ম কিছুতেই কবিতে পাৰিবে না। তৎপরিবর্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা শতগুণে ৪। স্বৰ্ণ ভীষণ দুর্ভাবনায় দিনদিন বিবর্ণ ও বিশুষ্ক হইতে লাগিল। তাহার পিতা, ঈসা খার প্রস্তাবে অস্বীকৃত জ্ঞাপনের পরে, ঈসা খাঁর মানসিক মতিগতি বা কি দাড়াইল, তাহাও জানিতে পারিল না। স্বর্ণের এই গভীর মনোবেদনা, চিত্তের অস্থিরতা, সবলা নামী একজন সখী ব্যতীত আর কেহই জানিত না। স্বর্ণ তাহাকে জীবনের সুখ-দুঃখভাগিনী জানিয়া প্ৰাণের কথা মর্ম-ব্যথা সমস্তই অকপটে তাহার নিকট প্ৰকাশ করিত। সরলা তাহার বাল্য-সখী । শিশুকাল হইতে উভয়ের গভীর অনুরাগ। স্বর্ণের বিপদে, স্বর্ণের দুশ্চিন্তায় সরলাও ব্যাকুলা হইয়া পড়িল। অবশেষে ঠাকুর যশোদানন্দ বা জহিরুল হকের নিকট পরামর্শ গ্ৰহণ করিবার জন্য স্বর্ণ সরলাকে কৌশল করিয়া পঠাইয়া দিল । শাহ সোলতান মহীউদ্দীনের নিকট হইতে পানিপড়া আনিবার উপলক্ষে সরলা জহিরুল হককে সমস্ত কথা নিবেদন করিল। যশোদানন্দ সুকুমারী স্বৰ্ণময়ীকে বাল্যকাল হইতেই আপনি কন্যার ন্যায় ভালোবাসিতেন এবং স্নেহ করিতেন। কারাগারে যখন যশোদানন্দের নির্যাতন ও লাঞ্ছনায় তাহার পূর্বের ভক্ত ও অনুরক্ত শিষ্য-শিষ্যগণ আনন্দবোধ করিতেছিল, তখন একমাত্র স্বর্ণের চক্ষেই তাহার জন্য সহমর্মিতার পবিত্র অশ্রুবিন্দু ফুটিয়াছিল। স্বর্ণ অবসর এবং সুবিধা পাইলেই চঞ্চল চরণে করুণাপূর্ণ আঁখি ও মমতাপূর্ণ হৃদয় লইয়া কিরূপ ব্যাকুলভাবে কারাগৃহের দ্বারে আসিয়া দাড়াইত এবং কিরূপ পরিপূর্ণ সহৃদয়তার সহিত তাহার দুঃখে সহানুভূতি জানাইত এবং পরিশেষে তাহার বুদ্ধি-কৌশলে জহিরুল হক সেই সাক্ষাৎ নৱক হইতে কিরূপে প্রমুক্ত হইলেন, তাহা স্মরণ করিয়া অশ্রু বর্ষণ করিতে লাগিলেন। স্বর্ণের প্রাণের যন্ত্রণ এবং মহাবিপদের কথা শুনিয়া তাহার স্নেহ-মমতা আরও উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। কোমলপ্ৰাণী, উদ্ভিন্ন-যৌবনা স্বৰ্ণময়ীর সরল হৃদয়খানি প্ৰেমানুরাগে কিরূপে দত্ত হইতেছে-নৈরাশ্যের ভীষণ ঝটিকা, তাহার আশা-আনন্দ ও আলোকপূৰ্ণ মানস-তরুণীকে কিরূপভাবে বিষাদেৱ অগাধ সলিলে ডুবাইয়া দিতেছে, তাহ ভাবিয়া একান্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। স্বৰ্ণময়ী যে ঈসা খাঁর প্ৰেমে আবদ্ধ হইয়াছে, জহিরুল হক তাহা স্বপ্নেও SOR